For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

শীত দূর্ভোগে তেঁতুলিয়ায় থমকে গেছে জনজীবন

Published : Wednesday, 17 January, 2024 at 12:37 PM Count : 126

লাগাতার ঘন কুয়াশা ও হিমেল শীতে থমকে গেছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের জনজীবন। শীত দূর্ভোগে অভাব ও রোগব্যাধিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ থেকে সাধারণ মানুষ। একদিকে তীব্র শীত আরেকদিকে শীতের কারণে কাজকর্ম কমে যাওয়ায় অসহায় জীবনযাপন করছেন অনেকে। 

নতুন বছরের জানুয়ারীর প্রথম দিন থেকে বেসামাল শীতের তান্ডবে বেকায়দায় পড়েছেন দিনমজুর, ভ্যানচালক, পাথর ও চা শ্রমিক থেকে দৈনিক শ্রমের উপর নির্ভরশীল মানুষগুলো। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির উপরে রেকর্ড হলেও দিনভর মেঘ, কুয়াশার বৈরি আবহওয়ায় তৈরি করেছে এ পরিস্থিতি।

বুধবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

মঙ্গলবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 
বুধবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি জানান জেলার প্রথম শ্রেণীর তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

তিনি জানান, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন এ জনপদ। ঘন কুয়াশার কারণে গতকালও দেখা মিলেনি সূর্য। মঙ্গলবার সকাল ও বিকেলে তাপমাত্রার পার্থক্য রেকর্ড ছিল মাত্র ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ এর  নিচে নেমে গেলে তীব্র শীত অনুভূত হয়। সে তীব্র শীতে হাড় কাঁপছে এ অঞ্চলের মানুষদের। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি এ জনপদের সব বয়সী মানুষজন শীত দূর্ভোগে পোহাচ্ছেন।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গতকালের মতো আজও ভোর থেকেই মেঘ-কুয়াশার আবরণে এ জেলা। কুয়াশার সঙ্গে বৃষ্টির মতো ঝরছে হিমেল শিশির। হিমেল বাতাসে ঝরাচ্ছে শীতের ঝাঞ্জা। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ থেকে শুরু করে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। প্রয়োজনের বাইরে ঘর থেকে শহরের মানুষজন বের না হলেও জীবিকার তাগিদে নিম্নআয়ের মানুষগুলো শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন তারা। দৈনন্দিন কামাই রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। শীত নিবারণে মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড়। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

শীত দূর্ভোগে পড়েছেন পাথর শ্রমিক আরিস, জুয়েল ও আবু তাহেরসহ অনেকের। তারা জানাচ্ছেন, লাগাতার শীতে বেসামাল পরিস্থিতিতে পড়েছেন তারা। দিনভর জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই নদীতে বরফগলা পানিতে পাথর তুলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের। জীবিকার অন্য কোনো পথ না থাকায় পাথর তুলেই বাধ্য হয়েই দিনভর ঠান্ডা পানিতে পাথর তুলে পরিবারের মুখে খাবার জুটাচ্ছেন তারা। দিন শেষে পাথর তুলতে গিয়ে ঠান্ডায় জ্বর-সর্দিতে ভুগতে হচ্ছে।

ভ্যানচালক আলী হাসান, আবুল কালামসহ কয়েকজন জানান, শীতে কামাই রোজগার কমে গেছে। কুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে ভ্যানে চড়তে চায় না কেউ। তাই কামাই হচ্ছে না। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে জীবন কাটছে।

নারী পাথর শ্রমিক ফিরোজা ও কদবানুসহ বেশ কয়েকজন জানান, নদীতে পাথর উঠছে কম। তাই কাজও কম। সকালে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে দেরি হলে অনেক সময় মহাজন কাজে নিতে চান না। কাজ না করলেও তো পেটে ভাতও যাবে না। যতো ঠান্ডাই হোক, ঠান্ডায় ঘরে বসে থাকলে তো পরিবারের মুখে খাবার জুটবে না। খুব অভাবে পড়েছি। বাজারের সবকিছুতেই দাম। নিরামিষ খেয়েই কোনো ভাবে দিন কাটাচ্ছি।

বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। তারাও ঠান্ডার প্রকোপের কারণে ক্ষেত খামারে কাজ করতে পারছেন না। বীজতলা কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। চরম বিপাকে পড়েছে আলু চাষিরা। তীব্র শীতের কারণে ক্ষেতের আলুতে ছত্রাকের আক্রমণ বেড়েছে। পাতা কুকড়ে যাচ্ছে। অতিমাত্রায় শীতের কারণে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর্লি ব্লাইট দেখা দেয়ায় ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

চাষিরা বলছেন, সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে ২-১ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে, শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শীতপ্রবণ জেলা হিসেবে প্রতি বছর পঞ্চগড়ে সরকারি-বেসরকারি ভাবে পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ করা হয়। এবারও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে এবারে শীতের শুরু নির্বাচনকালীন হওয়ায় পাঁচ উপজেলার ইউএনও এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি ভাবেও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রত্যন্ত এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে আরও কম্বলের চাহিদা রয়েছে। এ জন্য আরও শীতবস্ত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নতুন করে কম্বল বা শীতবস্ত্র পাওয়া গেলে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।

-এসকে/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,