কৃষি অর্থনীতির জেলা লালমনিরহাট। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে প্রতি বছর শীত মৌসুমে যেমন দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলে অধিক শীত পড়ে, তেমনি বর্ষা মৌসুমেও অধিক বৃষ্টির কারনে প্রথম বন্যার কবলে পড়তে হয় এ জেলার মানুষকে। অথচ শীত বা বৃষ্টির পূর্বাভাস জানার জন্য এখানেই নেই কোনো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।
ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে লালমনিরহাট জেলাটি উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত, যা প্রায় এক'শ কিলোমিটার লম্বালম্বি। এমন অবস্থানের কারনে গোটা জেলার এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলার তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের অনেক সময়েই তারতম্য ঘটতে দেখা যায়।
কর্মজীবি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন জানান, শুধু কৃষি নয় শ্রমজীবী বা অন্য যেকোনো পেশার মানুষের জন্য আবহাওয়ার আগাম বার্তা জানা এখন সবার জন্যই জরুরী।
একটি ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি আনিছুর রহমান বলেন, চাকুরির প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। বৃষ্টির দিনগুলোয় বৃষ্টিপাতের ওপর সেই ভ্রমণ অনেকখানি নির্ভর করে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা থাকলে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা সহজ হয় এবং শীতকালেও ব্যাপারটা সেরকমই।
সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের আদর্শ কৃষক লিটন মিয়া বলেন, শীতকালীন সবজির আবাদের সময় কুয়াশা, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, গড় বা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিংবা শৈত্য প্রবাহের খবর আগাম জানা গেলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। বিশেষ করে আলু, ফুলকপির আবাদে তাপমাত্রা কম থাকলে যেমন ফলন ভাল পাওয়া যায় তেমনি শীতকালীন বৃষ্টি ব্যাপক ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। ছত্রাকের আক্রমণে ফলন কমে যেতে পারে। এ কারনে স্থানীয়ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়মিত থাকা উচিত।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, তিস্তা নদীর পানিবৃদ্ধির ওপর এ অঞ্চলের বন্যা নির্ভর করে। শুধুমাত্র আগাম সতর্কতা না পাওয়ায় প্রতিবছর শত শত পরিবার বন্যা-নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ এ জেলাতেই নেই কোনো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কেন্দ্র।
কৃষিবিদদের মতে, তিস্তা ও ধরলা নদী বেষ্টিত এ জেলা কৃষিনির্ভর হওয়ায় শীত মৌসুমে যেমন শৈত্য প্রবাহের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন তেমনি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের সাথে সম্পর্কিত নদীর বন্যাসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর আগাম সতর্কবার্তা জানা জরুরী।
কৃষিবিদ আলীনূর রহমান বলেন, উদ্ভিদের জন্য আবহাওয়া এবং জলবায়ুর উপাদানগুলি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। যেকোনো ফসলের জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানের গড় তাপমাত্রা, বাতাসের আদ্রতা বা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, বৃষ্টিপাত, আকাশে মেঘের অবস্থান বিষয়গুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা থাকলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়। এমনকি প্রয়োজনীয় সময়ের বৃষ্টিপাতকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন খরচও কমানো সম্ভব। এতে কৃষক লাভবান হয়, চাষাবাদে আগ্রহ পায়।
লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র কৃষির জন্য প্রয়োজন আছে। তবে আমরা পার্শ্ববর্তী রংপুর, কু্রিগ্রামের রাজারহাট এবং নীলফামারীর ডিমলায় কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করি। যে যন্ত্র আছে, তা থেকে যা বার্তা বা ফোরকাস্ট পাই তাতে সমস্যা হয় না। তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র আমাদের প্রতিটি উপজেলাতেই আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু আবহাওয়ার বিষয়টি একটি সামগ্রিক বিষয় সেহেতু পর্যবেক্ষণাগার হলে একটা বাড়তি সক্ষমতা তৈরি হয়। তাতে স্থানীয়ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হবে। জেলার কালীগঞ্জে এরকম একটি পর্যবেক্ষণাগার তৈরির কাজ চলমান আছে বলে তিনি জানান। তবে কবে নাগাদ সেটা চালু হবে তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে আমি কথা বলবো, তাঁদের চাহিদা থাকলে নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এব্যাপারে চিঠি পাঠানো হবে।
এমএস/এমবি