কনকনে ঠান্ডা আর শীত উপেক্ষা করে বাঙালীর ঐতিহ্য পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীর পাড়ে বসেছে দুই দিনের মাছের মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন রকমের মাছ নিয়ে মেলায় আসছেন বিক্রেতারা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে মানুষের আনাগুনা। বেচাকেনায় হই-হুল্লুর দিয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতা ও আনন্দের সাথে মাছ কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
শনিবার থেকে দুদিনের এ মেলা বেশ জমে ওঠেছে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) শেষ হবে এ মেলার আনুষ্ঠানিকতা। এ বছর এ মেলায় ১০-১৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হবে বলে ধারণা আয়োজক কমিটির।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাছের মেলা উপলক্ষে বিশেষ করে সনাতনধর্মীরা উৎসবে মেতেছেন তাদের পাশাপাশি সকল শ্রেনিপেশার মানুষ মেলার উৎসবে মেতেছন। ব্যবসায়ীরা বড়বড় মাছ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে সাজিয়ে রেখেছেন বাজারগুলোতে। মেলায় উঠেছে বোয়াল, বাঘ, কাতল, চিতল, রুই, কাতলাসহ সব ধরনের মাছ। মেলায় বেশ চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন মাছ-বিক্রেতারা।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে মৌলভীবাজারের কুশিয়ারার পাড়ে শুরু হওয়া এ মেলায় জড়ো হয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাওড় ছাড়াও দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিশাল বিশাল আকৃতির মাছ আসে এ মেলায়। রাত ও দিনব্যাপী বড় বাঘাইড়, বোয়াল, রুই, কাতলা ও চিতলসহ নানা প্রজাতির রকমারি মাছ বেচা-কেনা হয় এ মেলায়। মাছের গন্ধে মৌ মৌ করে ওঠে পুরো এলাকা। মেলায় ছোট আকারের মাছের দাম হাকানো হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের মাছের দাম হাঁকানো হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের মাছের দাম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকাও হাঁকানো হয়।
ক্রেতারা জানান, মেলায় নানা জাতের বড় আকারের মাছ উঠলেও দাম বেশ চড়া। বিক্রেতাদের সঙ্গে দরাদরি করে মাছ কিনে নিতে হয়। তার পরেও সবাই সাধ্য মতো মাছ ক্রয় করছেন। মাছ বিক্রেতা বকুল পাল, অধন পাল বলেন, আমরা সব ধরনের মাছ নিয়ে এসেছি। মাছের মেলা উপলক্ষে সবাই বড় মাছটাই বেশি কিনেন। মাছের দাম একটু বেশি থাকায় আমরাও কিছুটা দাম বেশি চাচ্ছি।
বাজারে মাছ কিনতে আসা নিমাই মালাকার বলেন, পৌষ-সংক্রান্তি উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর মাছের মেলা বসে পুরো জেলা জুড়ে। মেলা উপলক্ষে বছরে একদিন বড়বড় বিভিন্ন জাতের মাছ দেখা যায়। যে যার মতো করে এক বাজার থেকে অন্য বাজার ঘুরে দাম দেখা মাছ ক্রয় করছেন। আমরাও মাছ কিনেছি। তবে এবার বাজার থেকে নয় শেরপুরের মেলা থেকে কিনলাম। প্রায় ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা চিতল মাছ কিনেছি। বাজারে মাছ দেখতো পরিবারের বাচ্চারাও এসেছে।
মেলা এলাকার খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী বলেন, বাঙালীর ঐতিহ্য পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এ মেলা প্রায় দুইশত বছরের পুরানো ঐতিহ্য। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছ আসে এখানে। উৎসবমুখুর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মানুষ তাদের সাধ্যমতো মাছ কিনে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে। এক সময় মুনুর মুখে এ মেলা বসতো। প্রায় দেড়শ বছর আগে এটি চলে আসে কুশিয়ারা নদীর তীরে।
মেলা পরিষদের সদস্য মো. আরিফ আলী জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর মেলা জমে উঠেছে। ব্যবসায়ীরাও ভালো ব্যবসা করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা এবার অনেক বেশি। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মেলায় এসছে। তিনি আরও বলেন, এ বছর এ মেলায় ১০-১৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল বলেন, শেরপুর মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে উক্ত স্থান সহ আশেপাশ এলাকায় কোন প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপ, হাউজি, ওয়ানটেন, গুটি, পুতুল নাচ, অশ্লীল নৃত্য সহ যাত্রাপালা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এই ধরনের কোন তথ্য থাকলে দয়া করে অফিসার ইনচার্জ, সদর মডেল থানা মৌলভীবাজারকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানান।
এসএস/এসআর