নির্বাচনী উত্তাপে উপেক্ষিত হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষ
Published : Tuesday, 2 January, 2024 at 7:27 PM Count : 160
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার সুযোগ পাবে আর মাত্র চারদিন। চারদিকে পোস্টার ব্যানার, মাইকিং, মিছিল মিটিং, করমর্দন, জনসংযোগ। গোটা জেলার আনাচে-কানাচে চলছে প্রার্থী আর তাঁদের সমর্থকদের দৌড়ঝাঁপ। নির্বাচনের এই ডামাডোলে পড়ে হতদরিদ্র ছিন্নমূল খেটে খাওয়া শীতার্ত মানুষের খোঁজ কেউ রাখছেন না। জনপ্রতিনিধি হওয়ার দৌঁড়ে ঢাকা পড়েছে শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার চিত্র। অথচ গত তিনদিন ধরে জেলা জুড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট ও এর আশেপাশে গত দু-দিন আগেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেখানে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। চলতি সপ্তাহে এই তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে রবিবার মধ্যরাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০ থেকে ৬০ জন ছিন্নমূল মানুষ প্লাটফর্মের বিভিন্ন স্থানে পাকা বারান্দা সহ বসার স্থানগুলোতে কোনো রকমে একটা কাঁথা বা পাতলা কম্বল মুড়ি দিয়ে রাত যাপনের চেষ্টা করছেন। জীবিকার তাগিদে নানা স্থানে ঘুরে বেড়ানো যেসব হতদরিদ্র মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাঁরা এই সারিবদ্ধভাবে স্টেশনের প্লাটফর্মে শুয়ে আছেন।
তাঁদেরই একজন ষাটোর্ধ ফুলমতি। স্বামীর ভিটে যার কেঁড়ে নিয়েছে ব্রহ্মপুত্র। স্বামী কিংবা পুত্র সন্তান না থাকায় এখানে সেখানে ভিক্ষে করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে রাত কাটাচ্ছেন। দিনভর ভিক্ষে করেন। পরে রাতে খেয়ে দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মের যাত্রীদের ছাউনির নিচে মাটিতে শুয়ে পড়েন। ঠান্ডার কারণে ঠিক মতো ঘুম হয় না। তার গায়ে একখানা কম্বল আর মাটিতে বিছানো একখানা চাদর।
তাঁর পাশেই শুয়ে থাকা আরেক বৃদ্ধ নজিম উদ্দিন জানান, ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই তার। কখনো স্টেশনে, কখনো বড় কোন স্কুলের বারান্দায় শুয়ে তার রাত কাটে। গরমের দিনগুলোই মশার কামড়ে রাত কাটলেও শীতের রাতগুলো নিদারুণ কষ্টে পার করতে হয়।
পৌষের দাপটে তাপমাত্রার পারদ নামছে প্রতিদিন। ঠান্ডার প্রকোপে ছিন্নমূল হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে সেই শীতকে পাল্লা দিয়ে। অথচ নির্বাচনের উত্তাপে এ বছর লালমনিরহাটের সেই শীতার্তরা এভাবেই উপেক্ষিত রয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে জেলার পাঁচটি উপজেলার জন্য ২০ হাজার কম্বল ইতিমধ্যেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কম্বলগুলো বিতরণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এমএস/এসআর