For English Version
রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪
হোম

৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে দুবাইয়ে মতিন

Published : Wednesday, 20 December, 2023 at 8:19 PM Count : 1093


বিদেশী অ্যাপ ‘আলটিমা ওয়ালেট’র মাধ্যমে শতকোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাজশাহীর এক ব্যবসায়ী। আবদুল মতিন নামের ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশ এখন খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবে তিনি দেশেই নেই। আছেন দুবাইয়ে। পুলিশ তাকে দেশে আনার চেষ্টা করছে। মতিনের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। থাকতেন রাজশাহী শহরে।

রাজশাহী মহানগরীর নিউমার্কেটে এশিয়ান ক্রোকারিজ, লাইফ কেয়ার মেডিকো, এশিয়ান স্কাই শপ প্লাসসহ তার কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আলটিমা ওয়ালেটের মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন দুবাইয়ে। নিউমার্কেটের দোকানপাটও এখন গোপনে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে দুবাইয়ে অবস্থানরত মতিনের হোয়াটসঅ্যাপে দু’দিন একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের শুরুর দিকে রাজশাহীতে আলটিমা ওয়ালেট এনে প্রথম প্রচারণা চালান নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মতিন। বিদেশী এই অ্যাপে তিনি অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে বিনিয়োগ করানোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে থাকেন। টাকা নেওয়ার সময় মতিন বিনিয়োগকারীদের চেকও দিতে থাকেন। আলটিমা ওয়ালেট অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে গত জুলাইয়ের দিকে তিনি দুবাই পালিয়ে যান।
এর আগে গত ২৬ জুন মতিনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। এই মামলার ১ নম্বর আসামি মতিনের প্রধান সহযোগী মাহবুবুর রহমান ওরফে মোনায়েম। তার বাড়ি মহানগরীর ডাঁশমারী পূর্বপাড়া মহল্লায়। এ বছরের শুরুর দিকেই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করা মোনায়েমই এখন বিপুল টাকার মালিক। পুলিশ মোনায়েম ও হৃদয়সহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে মতিনের নাগাল পাচ্ছে না।

ওই মামলার বাদীর নাম সবুজ আলী (২৩)। টাইলসের মিস্ত্রি সবুজের বাড়ি ডাঁশমারী পূর্বপাড়া মহল্লায়। মামলার এজাহারে বলা হয়, মহানগরীর উপ-শহরে প্রতারকেরা রীতিমতো অফিস খুলে বসেছিল আলটিমা অ্যাপের। মামলা করার আনুমানিক ৮ মাস আগে আসামিরা তাকে আলটিমা ওয়ালেট ও আলটিমা ফার্ম অ্যাপ দেখিয়ে জানান, এই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিমাসে লভ্যাংশ ঢুকতে থাকবে। এটি বিদেশী অ্যাপ হলেও আজীবন থাকবে। আজীবন লাভ আসতেই থাকবে। প্রলোভনে পড়ে তিনি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। গত ২০ জুন তিনি মতিনদের ওই অফিসে গিয়ে দেখেন, অফিসটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীর অসংখ্য মানুষ এখন এই অ্যাপের ভুক্তভোগী। তারা জানান, ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন মতিন। তার প্রধান সহযোগী মোনায়েমই এখন বিপুল টাকার মালিক। আলটিমা অ্যাপে বিনিয়োগ করানো শুরু করে মোনায়েম দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। নামী-দামী হোটেলে অবস্থান করে ফেসবুকে সেলফি তুলে দিতে থাকেন। রাজশাহীর আসাম কলোনীতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সাততলা একটি বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। রাতারাতি তার এমন উন্নতি দেখে শত শত যুবক হুমড়ি খেয়ে পড়েন এই অ্যাপে। এই মোনায়েমের মাধ্যমেও বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দুবাই পলাতক মতিন।

মহানগরীর ডাঁশমারী এলাকার লিটন ইসলাম জানান, মোনায়েম ও মতিনকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তিনি। প্রতিমাসে ১৪ হাজার লাভ পাওয়ার কথা ছিল তার। দুইমাসে পেয়েছেন ২৮ হাজার টাকা। বাকি টাকা গচ্চা গেছে। মতিন ও মোনায়েম আলটিমা অ্যাপের নামে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মূল এজেন্ট মতিন এখন দুবাইয়ে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, মতিন ও মোনায়েম নগদ টাকা নিয়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা বিনিয়োগ করাতেন। তাদের টাকা দিলেই গ্রাহকের অ্যাপে দেখাতো ইউএস-ডলার। একটি মোবাইল নম্বর ও একটি করে ই-মেইল আইডি খুলে দিতেন মতিন ও তার সহযোগীরা। তারপর আলটিমার হিসাবে বিভিন্ন প্যাকেজে বিনিয়োগ করাতেন। রাজশাহীর কয়েক হাজার গ্রাহকের শত কোটি টাকা বিনিয়োগ দেখান। তাই মতিন আলটিমার ‘পারপল ডায়মন্ড’ উপাধি পান। দুবাইয়ে তাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুবাই পালানোর আগে মতিন নিজেও অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। টাকা নেওয়ার সময় দিয়েছেন চেক। এখন শতাধিক চেক চুরির অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীদেরই হয়রানি করা হচ্ছে। মতিনের পক্ষে তার ভাই আনোয়ার হোসেন নয়ন ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধেই চেক চুরির মামলা করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ সুবিধা নিয়ে নয়নকে সহযোগিতা করেন বোয়ালিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা। বিষয়টি মহানগর পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও জানতে পেরেছেন। তাই মামলাটি তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে নিয়ে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একজন পরিদর্শককে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। এখন আমিরুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফার ব্যাপারেও অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে।

মতিনের ফাঁদে পড়ে নিঃশ্ব হয়েছেন রাজশাহীর ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম জয়। মতিন তাকে দিয়েছিলেন ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক। এখন উল্টো চেক চুরির মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। জয় জানান, গত বছরের শুরু থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত আলটিমায় বিনিয়োগের কথা বলে মতিন তার কাছ থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। মতিন বড় ব্যবসায়ী বলে তার ওপর আস্থা রেখে তিনি টাকা দেন। টাকা নেওয়ার জন্য মতিন তাকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। একবার মতিন তাকে আলটিমার এক অনুষ্ঠানে দুবাইতেও নিয়ে গিয়েছিলেন তার খরচে। আলটিমা বন্ধ হয়ে গেলে দুবাই পালিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।

জয় আরও জানান, মতিন দুবাই পালিয়ে গেলে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। পরে টাকা আদায়ে চেকের মামলা করেন। এরপর মতিনের ভাই নয়ন মহানগরীর বোয়ালিয়া পরিদর্শক আমিরুল ইসলামকে হাত করেন। আমিরুল ইসলাম গত ১৩ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে চেক চুরির মামলা রেকর্ড করেন। মামলাটি করেন নয়ন। মতিন আরও যাদের চেক দিয়েছেন, তাদেরকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় জয় ১৭ দিন কারাভোগও করেছেন। অন্যরাও হয়রানির মধ্যে আছেন।

জয় বলেন, মতিনের ফাঁদে পড়ে আমার ব্যবসা-বাণিজ্য সব শেষ হয়ে গেল। ব্যাংকে ঋণ হয়ে গেছে মোটা অংকের টাকা। ব্যাংক আমাকে টাকা ফেরতের চাপ দিচ্ছে। আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। উল্টো টাকা খেয়ে নয়নের মামলা রেকর্ড করেন পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম। তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় এসআই গোলাম মোস্তফাকে। তিনি হয়রানি করতে শুরু করেন। যখন-তখন বাড়ি তল্লাশি করেছেন এই বলে যে আমার কাছে নাকি আরও চেক আছে। চেক নাকি আমি চুরি করেছি। অথচ মতিন আমাকে একটাই চেক দেয়। সেই চেক নিয়ে আমিই আগে মামলা করেছি।

ভুক্তভোগীদেরই হয়রানি করার অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার এসআই গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার জানা নেই। আর মামলাটাও এখন আমার কাছে নাই। ১৫-২০ দিন হলো মামলাটা ডিবিতে হস্তান্তর হয়েছে।’

ভুক্তভোগীদের হয়রানি করার অভিযোগ অস্বীকার করে মতিনের ভাই নয়ন বলেন, ‘আমাদের ১০৮টা চেক চুরি হয়ে গেছে। সেই চেকই উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে মামলা করে।’

নয়নের ভাই মতিন আলটিমার মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হাস্যকর।’ দুবাইয়ে আলটিমার অনুষ্ঠানে মতিন থাকার ছবি দেখালে নয়ন বলেন, ‘যে দেশে বৈধ এটা সেই দেশের ছবি।’ নয়ন দাবি করেন, ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে মতিন দুবাইয়ে আছেন। কবে ফিরবেন তা তিনি জানেন না।

তবে ভুক্তভোগী সবুজ আলীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালিয়া থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কোন ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে মতিন দুবাই যাননি। তিনি পালিয়েছেন। তিনি এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্ত চলমান। পুলিশের যতগুলো টুলস আছে তার সবই ব্যবহার করে মতিনকে দেশে আনার চেষ্টা চলছে।’

এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft