জয়পুরহাটে নবনির্মিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস বুঝে নিতে চাপ!
Published : Wednesday, 24 April, 2024 at 4:47 PM Count : 297
সিডিউল মোতাবেক কাজ না হলেও জয়পুরহাটে নবনির্মিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস বুঝে নেওয়ার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানিয় গণপূর্ত বিভাগ থেকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জয়পুরহাট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. ফারজানা আকতার জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ১৬ টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জয়পুরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন নির্মানের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয় ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল। কাজটি পায় চট্টগ্রামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নির্মাণ ব্যয় চুক্তি করা হয় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। ৫ তলা ফাউন্ডেশনে ৩ তলা বিশিষ্ট জয়পুরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর। স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগ নবনির্মিত অফিস ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিলে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিন সদস্য কমিটি গঠন করে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপপরিচালক রোজী খন্দকার, সদস্য সচিব জয়পুরহাট পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক এ কে এম মোতাহার হোসেন ও অপর সদস্য হচ্ছেন প্রধান কার্যালয়ের সহকারি মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ।
সিডিউল অনুযায়ী কাজ দেখে শুনে ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য বলা হয়। কমিটির সদস্যরা গত ৩ মার্চ জয়পুরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য গেলে সিডিউলের সঙ্গে বেশ কিছু অমিল দেখতে পান। এ অবস্থায় সিডিউলের সঙ্গে অমিল পাওয়া বিষয়গুলো ৬ দফা আকারে উল্লেখ পূর্বক কমিটির পক্ষে আহ্বায়ক রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক রোজী খন্দকার স্বাক্ষরিত একটি পত্র প্রধান কার্যালয়ের মহাপরিচালক বরাবর ১১ মার্চ পাঠানো হয়।
পর্যবেক্ষনে সিডিউলের সঙ্গে অমিল পাওয়া ৬ দফা কাজের মধ্যে রয়েছে ভবনের মেইন গেট এস এস পাইপ দিয়ে করার কথা সিডিউলে থাকলেও এক ইঞ্চি এম এস এঙ্গেল বক্স দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সিডিউলে আলাদা ভাবে পাম্প হাউজ করার কথা থাকলেও ওয়টার রিজারভারের উপর পাম্প হাউজ নির্মান করা হয়েছে। সিডিউল মোতাবেক সেলিং পার্টিক্যাল বোর্ড ২১৫ স্কয়ার মিটার, ১২ মি. মি. পুরত্বের বার্মাটিক (বিটি) ভিনিয়ার্ড বোর্ড ও ওয়ালিং ১৫৮ দশমিক ৮৭০ স্কয়ার মিটার দেওয়ার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে ১৬ স্কয়ার মিটার সেলিং পার্টিক্যাল বোর্ড ও ৩২ স্কয়ার মিটার ওয়ালিং স্থাপন করা হয়েছে। সিডিউল মোতাবেক সিঁড়ি ও আবাসিক কোয়ার্টারের জন্য বারান্দায় ১০ মি.মি. টেম্পার্ড গ্লাস দিয়ে রেলিং তৈরির চুক্তি থাকলেও টেম্পার্ড গ্লাসের পরিবর্তে এস এস পাইপ দিয়ে রেলিং স্থাপন করা হয়েছে। ড্রেনেজ সিসটেমে সারফেস ড্রেইন ৬২ দশমিক ৪৮০ মিটার, এপ্রোস সারফেস ড্রেইন ১০১ দশমিক ৪৯০ মিটার টেন্ডারে থাকলেও বাস্তবে ৬০ ফুট সারফেস ড্রেইন করা হয়েছে। বাকী ৪০ ফুট ৬ ইঞ্চি ডায়ার পিভিসি পাইপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যা সিডিউল অনুযায়ী করা হয়নি মর্মে পর্যবেক্ষনে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়াও রয়েছে বাউন্ডারি ওয়ালের ষ্টিল গ্রীল ফেন্সিং টেন্ডার মোতাবেক হয়নি মর্মে উল্লেখ করে প্রধান কার্যালয়ে পর্যবেক্ষন প্রতিবেদনে পাঠানো হয়।
সিডিউলের সঙ্গে কাজের অমিল থাকার বিষয়ে কথা হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানিয় প্রতিনিধি আব্দুল হান্নান মিঠুর সাথে। সিডিউল মোতাবেক কাজ করা হয়েছে মর্মে দাবী করেন তিনি।
ভবন নির্মানে সিডিউলের সাথে অমিলের ব্যাপারে কথা হয় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. ফারজানা আকতারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগামী রোববার ভবনটি পাসপোর্ট অফিসকে বুঝে দেওয়া হবে। আবার বলেন আগামী বৃহস্পতিবারও বুঝে দেওয়া হতে পারে।
৪ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি ভবন হস্তান্তরে এতো তাড়াহুড়ো কেন জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী ড. ফারজানা আকতার বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে তাই উপর থেকে চাপ আছে। পাসপোর্ট অফিসের লোকজন নির্মাণ কাজের কি বোঝেন! সিডিউলের অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে মর্মে দাবী করেন এবং জিনিসপত্রে দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সুষ্ঠুভাবে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কিন্তু অদৃশ্য কারনে সিডিউল মোতাবেক কাজ সম্পাদন না করে ভবন বুঝে নিতে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী গণপূর্ত বিভাগ কাজ বুঝে নেওয়ার পর পাসপোর্ট অফিসকে হস্তান্তর করবে। এখন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে’বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে! কাজের অমিল পর্যবেক্ষন প্রতিবেদন পাওয়ার পরে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) শিহাব উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত আরও একটি পত্র প্রদান করা হয় ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য। যেখানে অমিল পাওয়া পর্যবেক্ষনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্য-ব্যবস্থা গ্রহনপূর্বক সিডিউল অনুযায়ী ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য বলা হলেও পর্যবেক্ষনে পাওয়া অমিল গুলোর ব্যাপারে কোন কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
জয়পুরহাট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক ও ভবন বুঝে নেওয়া কমিটির সদস্য সচিব এ কে এম মোতাহার হোসেন বলেন, বেশ কিছু কাজ সিডিউল মোতাবেক অমিল পাওয়ায় পর্যবেক্ষন সহ পরবর্তি নির্দেশনার জন্য বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারের ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প এটি। এখানে নয় ছয় কারো কাম্য নয়। সিডিউল অনুযায়ী কাজ না হলে সেই ভবন বুঝে নেওয়া যায়না। তার দায় দায়িত্ব কে নিবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমার চাকরী প্রায় শেষ সময়ে এসেছে, আমার চাকরী গেলেও ওই ভবন বুঝে নেওয়া সম্ভব নয়।
এসআর