For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

সেলফি বাসের চাপায় আরও ১ শিশুর মৃত্যু

Published : Sunday, 17 December, 2023 at 8:58 PM Count : 210


সম্প্রতি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বেপরোয়া গতির সেলফি বাসের চাপায় বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী শিক্ষার্থীসহ দুই জনের মৃত্যুর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও একই পরিবহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গেন্ডা বাসষ্ট্যান্ডের লাঙ্গলের মোড় এলাকা বাবা-মা ও ভাইবোনদের সামনেই তাদের প্রিয়জনের প্রান কেড়ে নেয় সেলফি পরিবহনের একটি দ্রুতগতির বাস।

নিহত তাওহীদ (১১) পাবনা জেলার সাথিয়া থানার ফকিরপাড়া এলাকার মোস্তফার ছেলে। 

নিহত শিশুর বাবা মোস্তফা জানান, স্ত্রী শাপলাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি পাবনা থেকে এসে সাভারের গেন্ডা এলাকা ভাড়া থেকে আল মুসলিম গ্রুপের তৈরী পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে গ্রামে দাদা-দাদির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। 
বার্ষিক পরীক্ষার ছুটিতে গ্রামের বাড়ি পাবনা থেকে শনিবার রাতে মা বাবার কাছে সাভারে বেড়াতে আসে তিন সন্তান তাওহীদ (১১) তানজিদ (৮) ও মুসলিমা (৬)। শনিবার রাতে গেন্ডা বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থেকে নেমে মহাসড়ক পার হয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করার সময় ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জগামী দ্রæতগতির সেলফি পরিবহনের একটি বাস তাওহীদকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।

এঘটনায় উত্তেজিত জনতা সেলফি পরিবহনের ১২টি বাসকে আটকের পাশাপাশি কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর চালায়। মহাসড়কে সেলফি পরিবহনের ধাক্কায় প্রতিনিয়ত একের পর এক লাশ হওয়ায় মহাসড়ম অবরোধ করে বিক্ষোভও করেন তারা। খবর পেয়ে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহটি উদ্ধারসহ আটককৃত সেলফি পরিবহনের বাসগুলো থানায় নিয়ে যায়। 

এদিকে ১ লাখ টাকায় সড়ক দূর্ঘটনার বিষয়টি ধামচাপা দিতে মামলার ধরন পাল্টে দিয়ে মধ্যস্থতা করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে হাইওয়ে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনা ঘটনালেও বেশিরভাগ সময় সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের সমঝোতায় মামলার ধরন পাল্টে যাওয়ায় সেলফি পরিবহনের বিরুদ্ধে সঠিক আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারছেনা ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। 

শিশু তাওহীদের আত্মীয় মোঃ আব্দুল আউয়াল সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, তাওহীদকে চাপা দেয়ার ঘটনায় আমরা সেলফি পরিবহনের বিচার দাবি করলে হাইওয়ে পুলিশ আমাদের পরামর্শ দেয় যদি মামলা করি তাহলে লাশ পোস্টমর্টেম হবে, পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরেও দেরি হবে। আমরা মালিক পক্ষের সাথে বসার ব্যবস্থা করে দেই। পরে পুলিশের মোবাইল দিয়েই আমাদের সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলিয়ে দেয়। মালিকপক্ষের রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আমাদের প্রথমে ৫০ হাজার পরে ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন। আমরা রাজি না হয়ে মামলা করতে চাই।

এরপরও কাউকে দায়ী না করে শিশুটির লাশ হস্তান্তরের জন্য চারটি পৃষ্ঠায় শিশুর বাবা মোস্তফা কামালের স্বাক্ষর নেন এসআই আব্দুল খালেক। পরে মামলার এজাহার লেখা হয়। এরপর আরো দুইটি স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এই অভিযোগ পত্রের এজাহারে আমরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেলফি পরিবহনের নাম উল্লেখ করতে চাইলেও পুলিশ কোনভাবেই নিতে রাজি হয়নি। আমরা একাধিক বার অনুরোধ করার পরেও তিনি অজ্ঞাত হিসেবে অভিযোগ পত্র নিয়েছেন।

রবিবার দুপুর ২ টায় সাভার হাইওয়ে থানার ভিতরে পুলিশের মধ্যস্থতায় ভুক্তভোগী পরিবার ও সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষের একটি আপস নামা করা হয়। সেখানে শিশুটির প্রাণের মূল্য ধরা হয় ১ লাখ টাকা। শিশুটির বাবা মোস্তফা কামালের অবর্তমানে নিকট আত্মীয় আব্দুল আউয়াল ও তার বন্ধু হাজী আমজাদ আলীর কাছে ১ লাখ টাকা নগদ হস্তান্তর করে সেলফি পরিবহন কতৃপক্ষ। 

সমঝোতার বিষয়ে আব্দুল আউয়াল বলেন, সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ আমাদের দুই পক্ষকে বসে সমঝোতা করতে বলেন। সেলফি পরিবহনের পক্ষে ছিলেন মোঃ রফিকুল ইসলাম আর শিশুর পক্ষে ছিলাম আমি। এছাড়াও এসআই আব্দুল খালেকসহ আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

সমঝোতা পত্রে সেলফি পরিবহন মালিকপক্ষের সাক্ষী রফিকুল ইসলাম বলেন, শিশু তাওহীদকে কোন গাড়িটি চাপা দিয়েছে এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ তদন্ত করছে। এই রুটে আমাদের ১৪০ টিরও বেশি গাড়ি চলাচল করে। তারপরেও পাবলিক যেহেতু আমাদের গাড়ি আটকে দিয়েছে তাই গরিব মানুষ বিবেচনা করে আমরা মানবিক কারণে ১ লাখ টাকা দিয়েছি। 

সাভার হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খালেক বলেন, অজ্ঞাতনামা গাড়ি চাপায় অজ্ঞাত চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এখন সেটা সেলফি পরিবহনের হোক আর অন্য কোন গাড়ি হোক তদন্তে বেরিয়ে আসবে। যদি সেলফি পরিবহন যুক্ত থাকে তখন তার নাম উল্লেখ করবো। সেলফি পরিবহনের নাম দিয়েতো গাড়ি সনাক্ত করা যায় না, এই পরিবহনের অনেক গাড়ি রয়েছে, এটার নাম্বার বের করে গাড়ি সনাক্ত করতে হবে। 

প্রসঙ্গতঃ গত ৭ ডিসেম্বর ধামরাইয়ে সেলফি পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত হন সাবেক জাবি শিক্ষার্থীসহ দুজন। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকটি বাস ক্যাম্পাসে এনে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা সেলফি পরিবহনের বাসের রোট পারমিট বাতিলের দাবিতে মানবন্ধনও করে। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় সেলফি পরিবহনের ধাক্কায় আফসানা আক্তার (২২) নামে এক নারী পুলিশ (এপিবিএন) সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। 

গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে আশুলিয়া থেকে মোটরসাইকেলে মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে সেলফি পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে সড়কে প্রাণ হারায় ১৬ বছর বয়সী শাহেরা আক্তার ওরফে শিলা। ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের মহাদেবপুর বাস্ট্যান্ড এলাকায় পাটুরিয়া ফেরিঘাটগামী সেলফি পরিবহনের একটি বাস রাস্তার পাশে থাকা অটোরিকশাকে পেছন থেকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দুই যাত্রীসহ অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়। 

একই বছরের মে মাসে সেলফি পরিবহন ও জননী পরিবহনের দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘিওরের মুলজান এলাকায় সেলফি পরিবহনের এক যাত্রী নিহত ও উভয় বাসের অন্তত ২২ জন আহত হন। একই বছরের জুলাইয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় সেলফি পরিবহনের বাসের চাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী দুই বন্ধু নিহত হন। একই মাসে ধামরাইয়ের ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ডে উল্টো পথে ঢাকাগামী লেন ধরে পাটুরিয়ায় যেতে গিয়ে এক পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে আহত করে সেলফি পরিবহনের বাস।

ওএফ/এমবি


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,