ময়মনসিংহের ভালুকায় বিনাবেতনে ২৩ বছর শিক্ষকতার পরও এমপিও তালিকা থেকে রহস্যজনক ভাবে বাদ দেয়া হয়েছে শাহিনা আক্তার নামে এক শিক্ষিকাকে।
ঘটনাটি উপজেলার মল্লিকবাড়ি গোবুদিয়া সবুজ বাংলা নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিটপিটিশন (নম্বর ২৯৭৫/২৩) করা হলে কর্তৃপক্ষকে দুই মাসের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলেও ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ভূক্তভোগী ওই শিক্ষিকা।
রিটপিটিশন, ভূক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মল্লিকবাড়ি গোবুদিয়া গ্রামে স্থানীয়ভাবে ১৯৯৮ সালে সবুজ বাংলা নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গোবুদিয়া গ্রামের শামছুল হক খানের ছেলে আবুল বাশার মো. আইয়ূব খান।
কিন্তু দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটি এমপিও না হওয়ায় ২০১৩ সালে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহিনা আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে তিনি চাকরী নিয়ে ওমান চলে যান।
দীর্ঘ চার বছর বিদেশ কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি দেশে চলে আসেন। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত হলে ওমান ফেরত সাবেক প্রধান শিক্ষক তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তারের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে না নিয়ে নিজেকে স্বঘোষিত প্রধান শিক্ষক দাবি কওে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে মনগড়াভাবে একটি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। অপরদিকে শাহিনা আক্তারকে এমপিও’র তালিকা থেকে বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই পদে রায়হানা খাতুন নামে তার এক আত্মীয়কে নতুন করে নিয়োগ দিয়ে এমপিও’র তালিকাভূক্ত করেন।
ভূক্তভোগী শিক্ষক শাহিনা আক্তার জানান, তিনি ২০০০ সালে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে যথাযথ নিয়মানুযায়ী সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার মো. আইয়ূব খান বিদেশ চলে যাওয়ার কারণে ২০১৩ সালে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন। তিনি ২৩ বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে বিনাবেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন। চার বছর পর আইয়ূব খান দেশে ফিরে এসে তাকে না জানিয়েই তার মনগড়া নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন এবং রায়হানা খাতুন নামে তার এক আত্মীয়কে সুকৌশলে সমাজ বিজ্ঞান পদে নিয়োগ দেন।
তিনি এখন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ তার এমপিও ভূক্তির জন্য দৌড়ঝাপ করছেন। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট করলে আদালত শাহিনা আক্তারকে স্বপদে বহাল রেখে এমপিওভূক্তির জন্য নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু বেশ কয়েক মাস অতিক্রম হলেও আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে ভূক্তভোগীর দাবি।
অভিযুক্ত আবুল বাশার মো. আইয়ূব খান জানান, তিনি দুই বছর টুরিষ্ট ভিসায় ওমানে ছিলেন। ওই দুই বছর বেনবেইজে তার নাম না থাকায় তিনি এমপিওভূক্ত হতে পারেননি। তাছাড়া রায়হানা খাতুন নামেও নতুন কোন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. ছাইদুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার আইয়ূব খান অভাব অনটনে পড়ে ২০১৩ সালে বিদেশ চলে যান।
স্কুল এমপিওভূক্ত হওয়ার কিছুদিন আগে দেশে এসে পূণরায় তিনি দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। প্রতিষ্ঠানে রায়হানা আক্তার নামে কোন শিক্ষক আছে কিনা তা তার জানা নেই। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষকই ভালো বলতে পারবেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিল্লুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানটির এতোসব সমস্যা তিনি জানতেন না। প্রধান শিক্ষক যেভাবে কাগজপত্র তার কাছে দিয়েছেন, এমপিও’র জন্য তিনি সেভাবেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে শাহিনা খাতুনের বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে জানান।
এএস/এমবি