বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও জাতির সূর্য সন্তানদের স্মরণের মধ্যে দিয়ে রাজশাহীতে বিজয়ের ৫২ বছর উদযাপন করা হয়েছে। এ দিন সাধারণ মানুষ যেমন বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন, তেমনি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের।
গতকাল শনিবার বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরেই রাজশাহীর প্রতিটি শহিদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। মহানগরীর ভুবনমোহন পার্ক শহিদ মিনার ও রাজশাহী কলেজ শহিদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তব অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের শহিদ মিনারে ভোর ৬টায় প্রথমেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এরপর সব কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জে উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান রাজশাহী কোর্ট শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। এরপর তিনি পুলিশ লাইন্স স্মৃতিস্তম্ভে এবং পুলিশ লাইন্স বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী পুলিশ সদস্যসহ সব শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডিশনাল ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সল মাহমুদ পিপিএম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাক, অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অপারেশনস) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও রাজশাহী রেঞ্জসহ রেঞ্জ কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার পুলিশ লাইন্স মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পুলিশ কমিশনার রাজশাহী পুলিশ লাইন্স বধ্যভূমিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ লাইন্সে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে আত্মত্যাগকারী শহিদ বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় রাজশাহী কোর্ট শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। পুস্পস্তবক অর্পনের পর গণকবরে গিয়েও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে মোনাজাত করেন এসপি।
এছাড়াও এখানে পুলিশের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রেঞ্জ এবং জেলা আনসার, বনবিভাগ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও ডাকবিভাগসহ বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর আগে রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্ক ও রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সর্ব শ্রেণির মানুষ।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে রাজশাহী জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিজয় দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রঙিন আলোকসজ্জা করা হয় রাজশাহীর সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। মহানগরীর বিভিন্ন মোড়ে প্রদর্শন করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রও। জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনও দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) বিকেলে জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে মেয়র একাদশ বনাম বিভাগীয় কমিশনার একাদশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজশাহীর সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ ওয়ার্ড-কার্যালয়গুলো থেকে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ এবং দেশাত্ববোধক গান। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতাল, শিশুসদন ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সকাল থেকেই পরিবেশন করা হয়েছে উন্নতমানের খাবার।
এফএ/এমবি