জয়পুরহাট হানাদারমুক্ত দিবস আজ
Published : Thursday, 14 December, 2023 at 3:40 PM Count : 160
১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে দেশের অনেক জেলা যখন পাক হানাদারমুক্ত হতে থাকলেও ব্যতিক্রম ছিল জয়পুরহাটে। এখানে পুরো নয় মাসব্যাপী যুদ্ধ চলে। ১৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাট পাক হানাদারমুক্ত হয়।
এই দিনে পাক হানাদারদের হটিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ভোরের আকাশ রাঙ্গিয়ে ওঠার আগেই শীতের কুয়াশা ছিন্ন ভিন্ন করে ঝাঁক ঝাঁক ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে ও উল্লাসের মধ্যে দিয়ে জয়পুরহাটের ডাক বাংলোতে প্রবেশ করে। হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা তখন পালিয়ে বগুড়া ও ঘোড়াঘাটের দিকে ছুটে যায় জীবন বাঁচাতে।
জয়পুরহাটের ডাক বাংলো প্রাঙ্গণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ’জয় বাংলা’ শ্লোগানে মাটি কেঁপে ওঠে। সমবেত কণ্ঠে ’আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় কেতন সোনালী বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবলু (বাঘা বাবলু)। এই স্বাধীনতার জন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক মা-বাবা, ভাই-বোনকে। স্বজনদের হারিয়ে অনেকেই এখনও শোকে পাথর হয়ে আছেন।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে নিয়ে এসে ১০ হাজারের বেশী মানুষকে ব্যানট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় জয়পুরহাটের পাগলা দেওয়ানে। এখানে শুয়ে আছে কত মায়ের অজানা সন্তান। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বদ্ধভূমি এই পাগলা দেওয়ান। এখানে পাক হানাদার বাহিনীর একটি পরিত্যাক্ত বাংকার এখনও হত্যাযজ্ঞের ভয়াল স্মৃতি বহন করছে। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচে আসা অনেকেই এখনও সেই করুন স্মৃতি বহন করছেন।
এছাড়াও, কড়ই কাদিপুর গ্রামে ৩৭১ জন মৃৎ শিল্পীকে (কামার-কুমার) গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সদস্যরা।
বিজয়ের এই দিনকে স্মরণ রাখার জন্য জয়পুরহাটে শহীদ ডা. আবুল কাসেম ময়দানে ৭১ ফুট উঁচু শহীদ স্মৃতি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদারদের নিকট থেকে মুক্তির এই দিনটি জয়পুরহাটবাসী স্মরণ করে থাকেন পাগলা দেওয়ান ও কড়ই-কাদিরপুর স্মৃতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ ও আলোচনা সভা করার মাধ্যমে।
এছাড়াও, যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী।
-এসআই/এমএ