রাত জেগে পেঁয়াজ পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা
Published : Wednesday, 13 December, 2023 at 5:37 PM Count : 250
বাজারে পেঁয়াজের আকাশছোঁয়া দামের কারণে ক্ষেত থেকে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ। এ কারণে চুরি ঠেকাতে চাষিরা ক্ষেতে পাহারা বসিয়েছেন। রাত জেগে তাঁরা তাঁবুতে বসে পেঁয়াজ পাহারা দিচ্ছেন। এই চিত্র রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার অনেক এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিদিরপুর বাজারে গত রোববার প্রতি কেজি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ১৫০-১৬০ টাকা এবং তাহেরপুরী পেঁয়াজ ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে এই হাটে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকা। পেঁজের দাম বাড়ার কারণে উপজেলার বেশকিছু এলাকার ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়। এ কারণে রাত জেগে পেঁয়াজের ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন চাষিরা।
উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের কৃষক হযরত আলী পেঁয়াজ চুরির ভয়ে গত রোববার থেকে ক্ষেতের পাশে তাঁবু গেড়ে রাত-দিন পাহারা দিচ্ছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তিনি তাঁবুর সামনে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন। আশা করছেন, সেখানে অন্তত ১০০ থেকে ১১০ মণ পেঁয়াজ পাবেন।
তিনি আরও বলেন, বুধবার সকাল ৯টার দিকে পাইকারি ক্রেতারা এসেছিলেন। তাঁরা ১০০ টাকা কেজি দরে দাম দিতে চেয়েছেন। কিন্তু পরিপক্ব না হওয়ায় তিনি পেঁয়াজ বিক্রি করেননি। পেঁয়াজ পরিপক্ব হতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগবে বলে জানান ওই কৃষক।
বেনীপুর গ্রামের কৃষক মাজহারুল ইসলাম দুই বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনিও ওই জমিতে ২৪ ঘণ্টা পাহারা বসিয়েছেন। তিনি বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই পেঁয়াজ নিয়ে একটু উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। চুরি হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় পাহারা জোরদার করতে হয়েছে।
উপজেলার পৌর এলাকার চাষি গোলাম রাব্বানী সাড়ে চার বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন। গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে তাঁর জমি থেকে ছয় মণ পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে। এরপর থেকে তিনি জমিতে পাহারা বসিয়েছেন।
এছাড়া গত কয়েক দিনে ঈশ্বরীপুর ব্লকের গলাই গ্রাম, ধামিলা গ্রাম, হাতীবন্ধা গ্রামের কয়েকজন কৃষকের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৯ হাজার ৭৫০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে গোদাগাড়ীতে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩২০ বিঘা জমিতে। ইতোমধ্যে আড়াই শ বিঘা থেকে পেঁয়াজ তোলা হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ মণ।
কৃষকের পেঁয়াজ পাহারা দেখতে সন্ধ্যায় হরিশংকরপুর মাঠে এসেছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমদ।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, খেতের পেঁয়াজ এখনও পরিপক্ব হয়নি। তবে বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার খবর শুনে চাষিরা পেঁয়াজ তোলার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। পেঁয়াজ পরিপক্ব হতে ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। তখন বিঘাপ্রতি ফলন অন্তত দেড় শ মণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মাঠ ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেতে পেঁয়াজের গাছ এখনও সবুজ রয়েছে। পরিপক্ব বা উপযুক্ত মানে হারভেস্টিংয়ের সময় এই গাছ সবুজ থাকবে না। নরম হয়ে হেলে পড়বে। একটি পেঁয়াজ মোটামুটি ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হবে বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।
আরএইচএফ/এসআর