For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

মেঘনা-তেতুলিয়ায় পাঙ্গাসের ছড়াছরি!

Published : Tuesday, 21 November, 2023 at 5:58 PM Count : 737

দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় জেলা ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে বড় সাইজের পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, গত ছয় দিনে যত পাঙ্গাস ধরা পড়েছে তেমনটি সাধারণত দেখা যায় না। এরা শান্ত প্রকৃতির মাছ। স্বাদুপানি থেকে স্বাদুপানিতে অভিপ্রায়ন ঘটে। তবে হালকা লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। বর্ষার সময় মোহনা অঞ্চলে এদের প্রজনন ঘটে। সাধারণত শীতের শুরু ও আর শেষের দিকে নদীতে পাঙ্গাস ধরা পড়ে। কিন্তু এতো পাঙ্গাস এভাবে কখনো আসতে দেখিনি। 

গত ০২ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ইলিশের প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে চষে বেড়াচ্ছেন জেলেরা। তবে ইলিশ নয়, জালে উঠছে পাঙ্গাস। একেকটির ওজন আবার ৮ থেকে ১০ কেজি। ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের এসব পাঙ্গাশ মাছের দর কাষাকষিতে মুখরিত হয়ে উঠছে স্থানীয় মৎস্য ঘাটগুলো। আর অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ
পাঙ্গাশ পাওয়ায় খুশি জেলেরা। বড় আকারের একটি পাঙ্গাসই বিক্রি করা হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

সোমবার সকালে চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ আড়তেই বড় আকারের পাঙ্গাস। যদিও এখানকার বাজারে নদীর পাঙ্গাসের তুলনায় চাষ করা পাঙ্গাসই বেশি ও অনেক সস্তা দামে পাওয়া যায়। একটি ১০/১২ কেজি ওজনের নদীর পাঙ্গাস মাছ যেখানে ৮০০-১০০০ টাকার মতো প্রতি কেজিতে বিক্রি হয়, সেখানে চাষের মাছের কেজি ওজন ভেদে ১৫০-২৫০ টাকার মতো দরে বিক্রি হয়।
এক সময় ভোলা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই দেশি পাঙ্গাস অনেক সহজলভ্য ছিল এবং দাম ছিল হাতের নাগালে। কিন্তু কালের বিবর্তনে জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা-পুকুর ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো, মা মাছ নিধন, নদীর চর, প্রজনন এলাকা ধ্বংস, পাঙ্গাসের পোনা নিধন, অতিরিক্ত মাছ আহরণ ইত্যাদি কারণে তা বর্তমানে দেশে নেই বললেই চলে।

নদীতে কীভাবে বাড়লো পাঙ্গাস?
মূলত পাঙ্গাসের এই পোনা ধরার যন্ত্রের নাম হচ্ছে চাই। এটি বাঁশ দ্বারা তৈরি একটি ফাঁদ। যেখানে খাবার দিলে শুধু পাঙ্গাসের পোনাই ধরা পরে। বহু দিনের পঁচা খৈল, গোবর, শুটকী, ময়দা, চিটাগুড়, লবন, এবং ভাতের মার ইত্যাদি এক ধরনের উপাদান দিয়ে এই খাবার তৈরী করা হয়, যা ছোট পাংগাসের পোনাকে খুব আকৃষ্ট করে। এরপর নদীর খাড়িতে এই খাবার চাই এর ভেতর দিয়ে রাতে নদীতে পাতা হয়। 

দেশি পাঙ্গাসের প্রজনন নিশ্চিত এবং পোনার সুরক্ষার জন্য চলমান বছরের জানুয়ারি থেকে পাঙ্গাসের এই চাই এর বিপরীতে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ৩১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ৪৫৬টি চাই জব্দ এবং ধ্বংস করা হয়। এক হাজার ১০০ কেজির মত জীবিত পাঙ্গাসের পোনা নদীতে অবমুক্ত করা হয়। 

প্রথমেই স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা সভাতে এর বিপরীতে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয় এবং সম্ভাব্য এই চাই পাতার এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এরপর যে সমস্ত স্থানে চাই পাতা হয় সেখানে অভিযান পরিচালিত হয়। আর এভাবে চাঁই দিয়ে মাছ ধরা ও বেহুন্দি জাল ব্যবহার অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারায় নদীতে পাঙ্গাস মাছের বড় হবার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

মৎস্য কর্মকর্তা জানান, এবার ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ০২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। বছরে দু'বার এভাবে মাছ ধরা এখন বাংলাদেশে বন্ধ থাকে। ফলে এ সময়ে পাঙ্গাস মাছও অবাধে বিচরণের সুযোগ পায়। আবার প্রজনন মৌসুমের পর ইলিশের পোনায় ভরে যায় বেশ কিছু এলাকা। আর ইলিশের পোনা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে পাঙ্গাস মাছ। ইলিশ মাছ প্রজনন মৌসুমে ধরা বন্ধ করায় ইলিশ যেমন বাড়ছে, তেমনই আবার এর কারণে নদীতে পাঙ্গাসও বাড়ছে। এ কারণে এবার বেশ বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস পাচ্ছেন জেলেরা।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, কয়েক বছরের চেষ্টায় চাঁই আর বেহুন্দি জালের ব্যবহার পটুয়াখালীতে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভোলাতেও এগুলো নিয়ে বেশ ভালো কাজ হয়েছে। ফলে ছোটো পাঙ্গাসগুলো নদীতে বড় হবার সুযোগ পাচ্ছে। আবার ইলিশ অভিযানের কারণে প্রচুর ইলিশ পোনা নদীতে বিচরণ করায় পাঙ্গাস পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে। নদীতে বড় সাইজের এত পাঙ্গাস পাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলোই প্রধান ভূমিকা রেখেছে।

-এসএফ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,