খাদের কিনারায় পড়ে গেছিলো ক্রিকেটের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে দলকে একাই টেনে তুললেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ইনজুরিতে পড়েও হাল ছাড়েননি, গড়েছেন রেকর্ড। ১২৮ বল মোকাবেলা করে ২১ বাউন্ডারি এবং ১০টি ছক্কায় ২০১ রানের ইনিংস উপহার দেন ম্যাক্সওয়েল।
ম্যাক্সওয়েলের এই ঝড়ো তাণ্ডবে ১৯ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের ৩৯তম ম্যাচে মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান।
নুর আহমদের বলে ম্যাক্সওয়েল ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ফাইন লেগে। সরাসরি বল চলে যায় মুজিব-উর রহমানের হাতে। তালুতে নিয়েও বলটি ফেলে দিলেন মুজিব। হয়ে গেলো ক্যাচ মিস। ওই এক ক্যাচ মিসেই ম্যাচ মিস করে ফেললো আফগানিস্তান। নিশ্চিত জয়ের ম্যাচটি ফেলে দিল হাত থেকে। ম্যাক্সওয়েল তখন ছিলেন ৩৩ রানে। অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১১২। মুজিব ক্যাচটি ধরতে পারলে হয়তো ম্যাচটির বয়স অল্প একটু বাড়তো।
কিন্তু এরপরই ইতিহাস রচনা করলেন ম্যাক্সওয়েল। সেই ‘জীবন’ পেলেন, এরপর তাকে কাজে লাগালেন পুরোপুরি ভাবে। এক অবিশ্বাস্য ইনিংস উপহার দিলেন। আফগান বোলিংকে ধুমড়ে-মুচড়ে দিলেন তিনি। শেষ দিকে এসে ইনজুরিতে পড়লেন। দৌড়ে সিঙ্গেল কিংবা ডাবলস নিচ্ছিলেন না। শুধু বাউন্ডারি মেরেই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান ম্যাক্সওয়েল।
২৯২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুতেই ট্রাভিস হেডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ডাক খেয়ে ফিরেছেন এই ওপেনার। তিনে নেমে ঝোড়ো শুরু করেন মিচেল মার্শ। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। নাভিনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ১১ বলে করেছেন ২৪ রান।
মার্শ ফেরার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। এই অভিজ্ঞ ওপেনার উইকেটে এসে সময় নিয়ে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার আগে ২৯ বলে করেছেন ১৮ রান। মার্কাস স্টইনিশ-জশ ইংলিশরাও রান পাননি। এই দুই ব্যাটার ফিরেছেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। তাতে ৯১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় অজিরা।
এর পরের গল্পটা কেবলই ম্যাক্সওয়েলের। অষ্টম উইকেটে কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে ২০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তিনি। যেখানে মাত্র ১২ রান এসেছে কামিন্সের ব্যাট থেকে। বাকিটা সামাল দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। সেটাও আবার হ্যামস্টিংয়ের চোট নিয়ে।
তিন অঙ্ক ছুঁতে ম্যাক্সওয়েল খরচ করেছেন ৭৬ বল। এরপর ১৫০ রানের মাইলফকে পৌঁছেছেন ১০৪ বলে। সময় যত গড়িয়েছে ততই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেছেন তিনি। ১৫০ থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে খেলেছেন মাত্র ২৪ বল। সবমিলিয়ে ১২৮ বলে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন তিনি।
এর আগে আফগানিস্তানের ইনিংসের শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন দুই ওপেনার ইব্রাহিম ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তবে জশ হ্যাজলউডের বল ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিচেল স্টার্কের হাতে ক্যাচ দেন গুরবাজ। ফলে ২১ রান করেই তাকে সাজঘরে ফিরতে হয় এই ওপেনারকে।
এরপর উইকেটে আসা নতুন ব্যাটার রহমত শাহকে নিয়ে ইনিংস মেরামত করেন ইব্রাহিম। এই দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেটে তোলেন ৮৩ রান। এই জুটি ভেঙ্গেছেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। রহমত লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে জস হ্যাজেলউডের হাতে ধরা পড়েছেন ৪৪ বলে ৩০ রান করে।
চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক শাহীদিকে নিয়ে আবারও ৫২ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহিম। অবশ্য মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে শেষ হয় শহীদির ২৬ রানের ইনিংস। উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা আজমতউল্লাহ ওমরজাই আউট হন জাম্পার বলে অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে। তার ব্যাট থেকে আসে ২২ রান।
এরপর মোহাম্মদ নবি ১২ রান করে ফিরলেও রশিদকে নিয়ে ইনিংস শেষ করে আসেন ইব্রাহিম। এই আফগান ওপেনার তার ইনিংস জুড়ে ৩টি ছক্কা ও ৮টি চারের মার মেরেছেন। রশিদ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৮ বলে ৩৫ রান করে। ইনিংস জুড়ে ৩টি ছক্কার পাশাপাশি রশিদ মেরেছেন ২টি চার।
প্যাট কামিন্সকে অষ্টম উইকেট জুটিতে ২০২ রান তোলেন ম্যাক্সওয়েল। ৬৮ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন কামিন্স। ম্যাক্সওয়েলের এই লড়াইয়ে কামিন্সের অবদান কম নয়। তিনি যে জুটিটি উপহার দিলেন, তা বিরল হয়ে থাকবে ক্রিকেট ইতিহাসে।
-এমএ