রাজশাহীতে চাষির গলার কাঁটা ধানি জমিতে পুকুর
Published : Tuesday, 30 April, 2024 at 4:01 PM Count : 466
রাজশাহীর দুর্গাপুরে গত এক দশকে শ্রেণি বদল করে ধানি জমিতে অবৈধভাবে প্রায় দেড় হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। এদিকে সেগুলো সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন মৎস্যচাষিরা। কিন্তু সংস্কারের অনুমতি দিচ্ছে না প্রশাসন। সে কারণে এসব পুকুর এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাছচাষিদের কাছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই আড়াই মাসে পুরোনো পুকুর সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন পড়েছে ৫০০ শতাধিক। তবে এগুলোর অধিকাংশই ধানি জমিতে খনন করা। বিভিন্ন সময়ে শ্রেণি বদল করে কৌশলে এসব পুকুর খনন করেছে একটি চক্র। পানির সংকট ও পাহাড়ি ঢলে ভরাট হয়ে এগুলো বর্তমানে শুকিয়ে গেছে।
সংস্কারের জন্য আবেদন করা মাছচাষিদের একজন উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামের সাইদুর রহমান। ১০ বছর আগে তিনি ধানি জমিতে পুকুর খনন করেছিলেন। সেটি এখন পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।
সাইদুর রহমান বলেন, ধানি জমিতে হলেও বর্তমানে খাজনা দিই পুকুর হিসেবে। ফলে সরকারও লাভবান হচ্ছে। কিন্তু ধানি জমিতে পুকুর হওয়ায় সংস্কারের অনুমতি মিলছে না। গত দেড় মাস ধরে এটি শুকিয়ে আছে। এবার মাছ চাষ করতে পারব কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
উপজেলার পুরানপুর গ্রামের বাবর আলী বলেন, ২ মাস ধরে ২০ বিঘা আয়তনের পুকুর ভরাট হয়ে শুকিয়ে আছে। সংস্কারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা আছে, কিন্তু এখনো অনুমতি মেলেনি। সংস্কারের অভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বছরে এই উপজেলায় ১১ হাজার ৯৭৩ টন মাছ উৎপাদন হয়; যার বাজার মূল্য ২৩ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। উপজেলায় ২৯০টি খাস পুকুর রয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন রয়েছে ৬ হাজার। এগুলোয় ৪ হাজার ৪৬৫ জন চাষি মাছ চাষ করেন।
জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্যসম্পদ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় বছরে ১১ হাজার ৯৭৩ টন মাছ উৎপাদন হয়। প্রতিদিন ৫৫-৬০ ট্রাক তাজা মাছ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।
আমিরুল আরও বলেন, প্রতি তিন বছর পর পর সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে পুকুরে খাদ্য তৈরি হয় না। মাছচাষিরা তাঁদের পুরোনো পুকুর সংস্কারের জন্য যোগাযোগ করছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, মাছচাষিদের কথা বিবেচনা করে পুরোনো পুকুরের পাড় সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটা বিহিত করা হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। কমিটি তদন্ত সাপেক্ষে জানাবে কোন পুকুরের পাড় সংস্কার প্রয়োজন।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ বলেন, জমির শ্রেণি যদি পুকুর হয়, তাহলে আবেদন করলে আমরা সংস্কারের অনুমতি দেব। এতে কোনো সমস্যা নেই।
আরএইচএফ/এসআর