Sunday | 19 January 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
Sunday | 19 January 2025 | Epaper

আসন কাড়াকাড়ি না কাইজ্যা-ফ্যাসাদে জড়িয়ে যায়

Published : Wednesday, 28 November, 2018 at 1:04 PM  Count : 600
হম্বিতম্বি ছেড়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলো ব্যস্ত আসন টানাটানিতে। নির্বাচনী রাজনীতিতে উত্তেজনাপূর্ণ এই সময়টায় রূপ বদলে যায় অনেকের। দলের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে এই খেলার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জোটের রাজনীতি দলীয় রাজনীতিকে আক্রে ধরায় সঙ্গত কারণেই আসন টানাটানির বিষয়টি আরো বেশি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে তৃণমূলের রাজনীতি বলতে যা বোঝায়, তা এখন স্থানান্তর হয়েছে রাজধানীর পার্টি অফিস আর কেন্দ্রীয় বড় নেতাদের দহলিজে। গত দুইতিন ধরে দৌঁড়ঝাঁপটা বেড়েছে রোটিনের আওতায়।

ক্ষুদ্রদল গণফোরাম এ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রিক হওয়ার পরও বিএনপি জোটে যোগ দেওয়ার পর রাতারাতি আলোচনায় চলে আসে। আর সেই আলোচনাকে উস্কে দিয়েছে দলছুট ও মনোনয়ন বঞ্চিতদের আসা-যাওয়ায়। বিভিন্ন দলে কোনঠাসা হয়ে পড়া নেতারা মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখে ড. কামাল হোসেনের ব্যক্তিইমেজকে পুজি করতে দৌড়ে গেছেন গণফোরাম অফিসে। আ ম সা আমিন, এম এম শাহীন এর মতো কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি সেই সুযোগটি তৈরি করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্যুত এবং দলে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্খায় থাকা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের দলে ভিড়েছেন। জীবনভর ধানের শীষের বিপরীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধা ও সংবিধানের অন্যতম প্রনেতা আবু সাইয়িদকে ধানের শীষকেই কাঁধে নিতে হবে।

দলছাড়াছাড়ির দৌঁড়প্রতিযোগিতা অবশ্য মাত্র শুরু হলো। তবে এটা বলা যায়- আওয়ামী লীগ থেকে সরাসরি বিএনপিতে কিংবা বিএনপি থেকে সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগদান হবে তুলনামূলকভাবে কম। যদিও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এম মঞ্জুর আলম মঞ্জুর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের চেষ্টাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিস্ময়কর ভাবতে নারাজ তার রাজনৈতিক ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করে। কারণ তিনি তাঁর অর্ধশতাধিক বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসের ৫/৬ বছর বাদে পুরোটাই আওয়ামী লীগার হিসেবেই টিকে আছেন। আর মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পরও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন তিনি মনোনয়ন না পেলেও আর আওয়ামী লীগ ছাড়ছেন না। এটাও বলেছেন, তিনি জীবনের শেষ সময়টা আওয়ামী লীগের হয়েই বেঁচে থাকতে চান। এবং দলের মনোনীত ব্যক্তির পক্ষেই এবারের নির্বাচনে কাজ করবেন। চট্টগ্রামের এই বিএনপি নেতা ছাড়া বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে এসেছেন উল্লেখ করার মতো আর কাউকে চোখে পড়ে না।
আবার ২৪ অথবা ২৫ নভেম্বর রাতেও টকশোতে গোলাম মাওলা রণি যেভাবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের স্তুতি চর্চা করে ২৬ তারিখই গুলশান অফিসে গিয়ে ধানের শীষ হাতে নিয়েছেন তাকে বড় ধরনের ঘটনা বলার সুযোগ নেই। কারণ তিনি আগেই আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত। শুধু তাই নয় গত কয়েক বছর তিনি একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগকে কথার তীরে বিদ্ধ করেছেন নিয়মিত। টকশোতে বসে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলতে শোনা গেছে তাকে। আর শেষ মুহূর্তে একরাতের জন্য বড় আওয়ামী লীগার হয়ে যাওয়া এবং পরদিনই বিএনপির ছাতার নিচে যাওয়ায় তেমন কিছু বড় বলে মনে হওয়ার কারণ নেই। আবার বিএনপিও যে তাকে মনোনয়ন দেবে এমন সংবাদও চোখে পড়েনি। যদি তাকে মনোনয়ন না দেওয়া হয় তিনি যদি ধানের ছড়াটা ছুরে ফেলে দেন তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

 কেউ কেউ সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা কিবরিয়া সাহেবের ছেলে রেজা কিবরিয়ার নির্বাচনে আসার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যখ্যা করছেন। কিবরিয়া সাহেব আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন এটা যেমন সত্য। কিবরিয়া সাহেবের দুঃখজনক মৃত্যুর পর তার স্ত্রীও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এটাও সত্য। কিন্তু রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের কোনো প্রাথমিক সদস্যও ছিলেন না কখনো। অন্যদিকে তিনি বিকল্পধারায় যাওয়ার পেছনে যে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন তাও অত্যন্ত ঠুনকো। তিনি বলেছেন, তার বাবার হত্যার বিচার ১০ বছরেও করেনি আওয়ামী লীগ। তাই তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেননি। তিনি যদি বাবার হত্যাকা-ের বিচার চান তাইলে বিএনপিজোটে গিয়ে কি সেটা পাবেন? বিএনপিকে তো এসব হত্যাকা-ের সহযোগী হিসেবে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। সুতরাং মানুষ ধরেই নিয়েছে পিতৃহত্যার বিচারটা বিষয় নয়, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন না আঁচ করতে পেরেই তিনি ড. কামাল হোসেনের কাছে গিয়েছেন।

ঐক্যফ্রন্টের জন্ম হওয়ায় দল হিসেবে লাভবান ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম। গণফোরামের জন্মের পর বোধ করি এই মুহূর্তে তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে সক্ষম হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিন্তু বিএনপির মতো স্বাধীনতা বিরোধীদের সহায়ক দলের প্রতি আস্থা স্থাপন করতে না পারা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এখন ড. কামাল হোসেনকে ভরসাস্থল বলে মনে করছেন। সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক ব্যক্তি তাই গণফোরামেই যোগ দিতে দেখা গেছে সম্প্রতি। ভবিষ্যতে দলের অবস্থান কতটা পরিবর্তন হবে তা অবশ্য এখনই বলে দেওয়া যায় না। কারণ দল পরিচালনা ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের সাফল্য প্রমান হয়নি ইতিপূর্বে।

এই মুহূর্তে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে গিয়ে বিএনপি হিমসিম খাচ্ছে। দলীয় নেতাদের প্রতি অনাস্থা হোক কিংবা যে কোনো কারণেই হোক বিএনপিকে নিজেদের মনোনয়ন তালিকায় অধিকাংশ আসনে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছে। এমনও মনে করা হচ্ছে মনোনয়ন বঞ্চিতরা যাতে অন্য দলের হয়ে নির্বাচনে যেতে না পারে সেই জন্যই আটকে রাখার কৌশল হিসেবে একই আসনে একাধিক মনোনয়ন দিয়েছেন তারা। এটা যে নিজ দলের ভিতরে আস্থা-অনাস্থার খেলা তা স্পষ্ট। নিজেদের দলের ভিতরের এই খেলার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে শররিকদের চাপ। শরিকদের চাপ নিয়ে যে তারা কতটা তটস্ত এটা বোঝা যায় ড. মোশাররফ হোসেন ও অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের টেলিফোন সংলাপ থেকে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের মাহমুদুর রহমানের দলীয় পরিচয় মাইক্রোস্কোপিক হলেও তিনিও দল গড়ার মানসে আসন বাগিয়ে নিতে চাইছেন বিএনপি থেকে। যাকে সংখ্যাগত অস্বাভাবিক মনে করছে অনেকেই। অন্যদিকে গণফোরামকে যে বিএনপি সবচে কম আসন দিতে হবে ভেবেছিলো সেই গণফোরামে যেভাবে দলভুক্তি হয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তাকে আমলে না এনে পারছে না বিএনপি। ব্যক্তি ইমেজ বিবেচনায় তাদের বাদ দিতে পারছে না আবার দলের ত্যাগি নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করাটাও তাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিক বিবেচনা করলে বলতেই হবে বিএনপি এখন বেশ টানাপোড়েনে আছে ক্ষুদ্র দল হিসেবে বিবেচিত গণফোরামকে নিয়ে। ড. কামাল হোসেন দর কষাকষিকে প্রাধান্য না দিয়ে বিএনপির দুশ্চিন্তাকেও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

 অন্যদিকে জাতীয় পার্টি আগে থেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় থাকায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে কিছুটা স্পষ্টতা থাকলেও জোটভুক্ত ছোটদলগুলোও বসে নেই। ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, জেপি ( আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি) আওয়ামী লীগের প্রস্তাবকে নমনীয়ভাবে গ্রহণ করলেও জাতীয় পার্টি বেঁকে বসেছে মোটামুটি। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং রওশন এরশাদ বার্ধক্যজনিত কারণে হাসপাতালে থাকায় জিএম কাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাল ধরেছেন। আর এই পরিবর্তনটা জোটের রাজনীতির জন্য কেমন হবে হুট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর ভাই’র মতো দোদল্যমান নন।

আওয়ামী লীগ শরীকদের জন্য ৭০ আসন খালি রেখেই তাদের মনোনয়নপত্র বিলি করেছে। যা তারা আগেও বলে এসেছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির চাহিদা পূরণ হয়নি বিধায় তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি এখনো। প্রশ্নটা বড় আকারেই দেখা দিয়েছে মহাজোটে। যদি জাতীয় পার্টি সমঝোতায় না আসে তাহলে আওয়ামী লীগের ক্ষতি এবং জাতীয় পার্টির ক্ষতির পরিমানটা কি হবে এবং এক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটই বা কতটা লাভবান হবে, শিগগিরই বোঝা যাবে।

 দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান এখনো কমবেশি আছে। তবে সেটাও দশ-বিশ বছর আগের মতো নেই। দেশের সব জায়গাতেই তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি আছে। এবং সেই অনুযায়ী কিছু ভোটও আছে। সেই ভোটগুলো জোটভুক্ত হলে আওয়ামী লীগ লাভবান হবে। কিন্তু যদি ভাগাভাগি হয় তাহলে আওয়ামী লীগের চেয়ে জাতীয় পার্টিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে বেশি। এটা অবশ্য সাময়িক হিসাবকে আমলে আনলেই বাস্তব হবে। আসন ভাগাভাগির এই খেলায় জাতীয় পার্টি ছিটকে পড়লে- উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেও জাতীয় পার্টিকে প্রতিদ্বন্দিতা করতে হবে শক্ত দুটি দলের প্রতিপক্ষ হিসেবে। সেখানে বিএনপির ভোট আওয়ামী লীগের তুলনায় কম হলেও জাতীয় পার্টিকে প্রতিদ্বন্দিতা করতে হবে কঠিনভাবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী ফলটা তাদের অনুকূলে কতটা যাবে তা দেখার বিষয়। আবার অন্য এলাকায় জাতীয় পার্টির ভোটগুলো যদি নৌকায় না ওঠে তাহলে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিদ্বন্দিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কতটা বেকায়দায় পড়তে হবে তাও বিবেচনায় আসতে হবে। কারণ ওইসব এলাকার জামায়াতের ভোটগুলো ধানের শীষে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রায় শতভাগ।

 জোটের পীড়ন যে কি তা বোঝা যায় মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের মুখের দিকে তাকালে। আবার মনোনয়ন পাওয়াও যে স্বস্তিদায়ক নয় তাও স্পষ্ট বিএনপি প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। মনোনয়নপত্র পাওয়ার পরও তারা অনেকেই জানে না তারা নির্বাচন করতে পারবে কিনা। হযবরল অবস্থা প্রায় প্রতিটি আসনে। এই টানাহেঁচড়া আর আঁকাবাঁকা চলার এই পথ কাকে গন্তব্যে পৌঁছাবে তা অনিশ্চিত। শেষকথা হিসেবে বলা চলে নির্বাচনী জ্বর এখন ঝড়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। সেই ঝড়ে কারো ঘর ভাঙবে কারো অবশ্যই বসতি হবে।


লেখক- সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।
 
 
Related topic   Subject:  নির্বাচন   ড. কামাল হোসেন   গণফোরাম   বিএনপি   শেখ হাসিনা   আওয়ামী লীগ  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close