কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের বিধান রেখে ‘সুপ্রিম কোর্ট বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর গেজেট জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ আইনসহ সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ কথা জানান। এর আগে, ১৭ জানুয়ারি অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন, বিগত সরকারের সময় যে অনাচার হতো, মানবাধিকার লঙ্ঘন হতো, মানুষকে যে দমন-নিপীড়ন করা হতো, সেটার একটা বড় প্ল্যাটফর্ম ছিল উচ্চ আদালত। চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরেও মানুষ সেখানে প্রতিকার পেত না। কারণ ছিল, উচ্চ আদালতে রাজনৈতিক সরকারগুলো সম্পূর্ণভাবে দলীয় বিবেচনায়, অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য লোকদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিত। উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে যদি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ না পায়, তবে ১৮ কোটি মানুষের মানবাধিকারের প্রশ্নটি অমীমাংসিত ও ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতে দক্ষ, অভিজ্ঞ, দল নিরপেক্ষ, প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা বিচারক নিয়োগ পাবেন—এমন একটি চাহিদা সমাজে বহু বছর ধরে ছিল। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন থেকে এই ধরনের দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল।
আইন উপদেষ্টা বলেন, অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে, এই আইনটা হয়েছে। আইনটি রচনা করার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির অফিস থেকে একটি ড্রাফট পাঠানো হয়েছিল, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন থেকে একটি খসড়া পাঠানো হয়েছিল, ২০০৮ সালে এরকম একটি অধ্যাদেশ করার প্রক্রিয়া ছিল, সেটার কপি-কিছু পর্যালোচনা করেছি আমরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা একটি পরামর্শক সভা করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি ভালো একটি আইন করার জন্য।
অধ্যাদেশে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল করার কথা বলা হয়েছে, জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সেই কাউন্সিল হবে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুজন বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল-তাদের নিয়ে এ কাউন্সিল গঠন করা হবে।
এ কাউন্সিল প্রথমে যাচাই-বাছাই করবে। তারা নিজ উদ্যোগে অনেক নাম সংগ্রহ করবেন। একই সঙ্গে যে কোনো মানুষ, যে কোনো আইনজীবী বা যে কেউ কাউকে রেফার (বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার জন্য) করে চিঠি পাঠাতে পারবেন। সেটা উন্মুক্ত থাকবে। কাউন্সিল প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার পর ইন্টারভিউ নেবেন।
আসিফ নজরুল বলেন, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে বিচারকরা নিয়োগ পাবেন। আশা করছি, উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে হাইকোর্টে যে পরবর্তী নিয়োগ আছে, আগের যে কোনো আমলের চেয়ে একটি ভালো নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দিতে পারব।
জুডিশিয়াল সার্ভিস এবং আইনজীবীদের মধ্যে এখন হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন আইন অনুযায়ী, দুই ক্ষেত্র থেকে নিয়োগের জন্য কোনো অনুপাত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে কিনা-এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এটি দীর্ঘদিনের টেনশন-কতজন আইনজীবী থেকে বিচারক করা হবে, আর কতজন নিম্ন আদালতের বিচারক থেকে করা হবে। আমরা এটা কাউন্সিলের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়েছি। আমরা বলেছি, যথোপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব যাতে থাকে।
পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি সমাজে দীর্ঘদিন ধরে আছে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্যে পরিণত হয়েছে। এটির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। একটু সময় লাগছে খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।
স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগের কথা ও জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগ আছে, সরকারি কৌঁসুলিরা যেহেতু দলীয়ভাবে নিয়োগ পান, সে জন্য তারা অনেক সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন না। রাষ্ট্রের পক্ষে ভূমিকা পালন না করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করেন। এর সমাধান হচ্ছে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে আইন তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এটি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আরও জানান, ৩৬ ধরনের কাগজপত্র আইন মন্ত্রণালয় সত্যায়ন করে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে এগুলো অনলাইনে করা হচ্ছে।
আরএন/এসআর