যশোরের মনিরামপুরের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসনের প্রাচীর ঘেরা ভিতর-বাইরের দেওয়ালে নানা রঙ-এর দামী টাইলস দিয়ে সাটানো সুরম্য ভবন “কাজী কমপ্লেক্স”র বাড়িটি অবকাঠামো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। বর্তমানে সূর্য ডোবার পর রাত ভারি হতেই ওই বাড়িতে চলে মাদক কারবারি ও অবৈধ দেহ ব্যবসা। শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পরে ৫ আগস্ট কয়েক দফায় এই বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভবনের ভিতরে দামী আসবাবপত্র, শোবার ঘরের বেড সব কিছুই পুড়ে ছাই। ঘরে এখন কেবল পড়া গন্ধ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। অথচ মাত্র পাঁচ মাস আগেও ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই বাড়িতে নেতা-কর্মী আর তদবিরকারিদের ভীড় লেগে থাকতো। বাড়ির সামনে থাকতো সারি সারি মোটরসাইকেল আর প্রাইভেট কার। অথচ বাড়িটি এখন পোড়ো বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন বাড়িতে গেলে কারো দেখা মিলে না। বাড়িটি যেন জনশূন্য এক ভুতুড়ে বাড়ি। বাড়ির ভিতরে আসবাবপত্রসহ দামি দামি শো-পিচ, কাঁচ ও সিরামিকের বাসনপত্র সব কিছু ভেঙ্গে চুরে তছনছ। কাঁচের টুকরো আর পোড়া কাঁথা-বালিশ, লেপ-তোষক হতে এখনো পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে। ঘরের দামি কাঠের দরজা, ভিতরের গ্রিল কিছুই নেই। বিভিন্ন স্থানে মাদব সেবনের সরঞ্জাম। বোঝা যাচ্ছে এখানে মাদক সেবন ও অবৈধ কাজ ছাড়া কেউ আসে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, সরকার পতনের পর থেকে কয়েক দিনের ব্যবধানে বাড়ির সকল দামি আসবাবপত্র, কাঠের দরজা, গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বত্তরা। বাড়ির মেইন গেটও নেয়া হয়েছিল। পরে স্থানীয় কিছু লোকজন সেটি উদ্ধার করে এনে রেখেছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাড়িতে মেয়রের পরিবারের কোন সদস্যের দেখা মেলেনি। এই সুযোগে এলাকা কতিপয় মাদক কারবারিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল এখন এটি। বলা চলে বাড়িটি এখন তাদের দখলে।
জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুই বারের পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান ৫ আগস্ট সরকার পতনের শেষ খবর পাওয়া আগ মূহুর্ত পর্যন্ত বাড়িতে ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, প্রথমে হামলার সময় বাড়ির ভিতরেই ছিলেন কাজী মাহমুদুল হাসানসহ তার পরিবারের সদস্যরা। পরে সুযোগ বুঝে গহনাপত্র, নগদ টাকা-পয়সা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যান তারা। এই বিলাস বহুল বাড়িটি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে কয়েক দফায় ভাংচুর, লুটাপাট ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বিকেলে একদফা বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর চালানো হয়। পরে সন্ধ্যায় আরও একদফা হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তারা বর্তমানে কোথায় আছেন কেউ জানেন না।
স্থানীয় নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী মন্ত্রী (সাবেক) স্বপন ভট্টাচার্য্যের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে পৌরসভায় চলতো টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য। এসব কারনেই তার উপর জনতার ক্ষোভ ছিল। এছাড়া বিগত দুইটি পৌর নির্বাচনে দলীয় লোকজন ছাড়া কাউকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ওই দুই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন। এর আগের মেয়াদে শহীদ ইকবাল হোসেন দুই বার জনতার সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। কিন্তু পরবর্তি ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দুইটি নির্বাচনে তার পক্ষে কেউ ভোট দিতে পারেন নি। এছাড়া পৌরসভা নিজের ও দলীয় অফিস বানিয়ে ফেলেছিলেন মেয়র হাসান। সাধারণ লোকজনের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনের অভিযোগ রয়েছে অগোনিত। মূলতঃ এসব ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে পুঞ্জিভূত হতে থাকে। যার বহিপ্রকাশ ঘটে ৫ আগস্ট পতিত শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর।
এ ব্যাপারে কাজী মাহমুদুল হাসানসহ তার পরিবারের কারো মোবাইল ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এসআর