শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত এলাকায় পরপর কয়েকটি চোরাচালান জব্দ করার ঘটনায় বিজিবি’র উপর চড়াও হয়েছে চোরাকারবারী দলের সদস্যরা। সীমান্তবর্তী এলাকায় টহল জোরদারের পাশাপাশি গভীর রাত পর্যন্ত দোকানপাট খোলা না রেখে বন্ধের নির্দেশনা দিতে যায় বিজিবি। এসময় চোরাকারবারীদের স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে বিজিবির উপর চড়াও হলে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে দৌড়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে ময়মনসিংহ সেক্টরের ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধীনে থাকা রামচন্দ্রকুড়া ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা।
গতকাল রোববার (১২ জানুয়ারি) রাত দশটার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের গ্রাম পানিহাতা মসজিদ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, বিজিবির উপর হামলার ঘটনায় তিন এলাকাবাসীকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশে দিয়েছে বিজিবি। এরা হলো- পানিহাতা গ্রামের সামাদুল ইসলাম (৩৮), একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৩০) ও একই গ্রামের আব্দুল হাই (৩০)।
সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দিয়ে মাদকসহ সব ধরণের চোরাচালানী ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। সম্প্রতি চোরাচালান বন্ধে মাঠে নামে বিজিবি। এরই অংশ হিসেবে গত ৫ জানুয়ারি রাতে পানিহাতা গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ২টি ভারতীয় গরু, ১০ জানুয়ারি রাতে পানিহাতা তালতলার মাঠ থেকে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য এবং সবশেষ ১০ জানুয়ারি রাতে পানিহাতা চায়না মোড় এলাকার একটি মাঠ থেকে ৪টি ভারতীয় গরু জব্দ করে রামচন্দ্রকুড়া ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। এ নিয়ে চোরাকারবারী দলের সদস্যরা বিজিবির উপর ক্ষিপ্ত হয়। পাশাপাশি চোরাকারবারী দলের দুই পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এ দ্বন্দ্বের জেরে রবিবার (১২ জানুয়ারি) দপুরে পানিহাতা চায়না মোড়ে দুইপক্ষের মাঝে মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি আরোপ করে রামচন্দ্রকুড়া বিজিবি। রাত গভীর হওয়ার আগেই পানিহাতা এলাকার সব দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে টহল জোরদার করে তারা।
এদিকে, রাত দশটার দিকে পানিহাতা মসজিদ মোড় এলাকার একটি চায়ের দোকানে বসে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জুব্বারসহ কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের চলে যেতে নির্দেশনা দেন এবং লাঠিচার্জ করেন। এতে স্থানীয়রাসহ চোরাচালানে জড়িতদের স্বজনরা বিজিবির উপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। পরে রামচন্দ্রকুড়া ক্যাম্প থেকে অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে আক্রমণকারীদের ধরতে রাতেই ওই এলাকায় অভিযান চালায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বিজিবি আগে থেকে কোন প্রকার সতর্কতা ছাড়াই দোকানে বসে থাকা সাবেক ইউপি সদস্যসহ অন্যদের উপর লাঠিচার্জ করে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বিজিবিকে অবরুদ্ধ করেন। পরবর্তীতে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাড়িঘরে হামলা করে।
তারা আরও বলেন, বিজিবির উপর হামলার ঘটনায় যাদের আটক করা হয়েছে তারা ওই হামলার ঘটনায় জড়িত নন।
সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জুব্বার জানান, আমি বাসার কাছেই মসজিদ মোড়ে দোকানে বসে চা পান করছিলাম। এসময় হঠাৎ করেই বিজিবির টহলরত সদস্যরা আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে। যা দুঃখজনক। চোরাচালানবন্ধ হোক, তা আমরাও চাই। তবে সাধারণ মানুষ যেন হয়রানীর শিকার না হয়।
ওই এলাকার মাসুদ রানা রতন জানান, সীমান্তে চোরালাচালান বেড়ে গেছে। এদের কারণে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এর অবসান চাই। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। পাাশাপাশি বিজিবি যেন সাধারণ মানুষকে হয়রানী না করে সে জন্য অনুরোধ জানাই।
তবে নীরিহ কাউকে হয়রানী করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিজিবি। বিজিবির উপর হামলা এবং চোরাচালানে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয় বিজিবির পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সেক্টরের ৩৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ সানবির হাসান মজুমদার জানান, সম্প্রতি সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ করতে বিজিবির কঠোর অবস্থান এবং চোরাচালানের মালামাল জব্দের ঘটনায় চোরাকারবারীরা বিজিবি’র উপর চড়াও হয়ে হামলা চালায়। সীমান্তে চোরাচলান বন্ধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এসব ব্যাপারে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এমএস/এসআর