Friday | 7 February 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
Friday | 7 February 2025 | Epaper
BREAKING: ৩ দিনের মধ্যে ইস্যু না হলে উড়োজাহাজের বুকিং টিকিট বাতিল      আইসিসি'র ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা      কারাবাও কাপের ফাইনালে লিভারপুল      অভিনেত্রী শাওন গ্রেপ্তার      তিতাস নদীতে নৌকা ডুবে মা-ছেলে হতাহত      হাসিনার ভাষণে ক্ষুব্ধ হয়ে ধানমন্ডি ৩২-এ বাড়ি ভাঙচুর      ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর      

শীতে ঘুরে আসুন চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার

Published : Sunday, 5 January, 2025 at 5:16 PM  Count : 369

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলীয় পর্যটন বহুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলায় অবসর সময়কে আনন্দময় করে তোলার জন্য রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যরে কাছাকাছি থেকে শীতের ছুটি উপভোগ করতে চান অনেকেই। তাইতো জেলার পর্যটন স্পটগুলো শীতকালীন ছুটিতে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ভ্রমণ পিয়াসী, চঞ্চলকর মানুষ একটু অবকাশ পেলেই ছুটে যায় দিগ দিগন্তে সৌন্দর্য্যে আকর্ষণে। জন্মগত ভাবেই মানুষ কৌতূহলী। তার সে কৌতূহল নতুন নতুন বিষয়ের প্রতি। প্রকৃতি ও মানুষের সৃষ্ট সৌন্দর্য্যরে নানা নিদর্শন সে মানবীয় সত্তা দিয়ে অনুভব ও উপলব্ধি করতে চায়।

এ জেলায় টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, খাসিয়া পল্লী, এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুন্ড, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ছায়া নিবিড় পরিবেশে অবস্থিত নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠের সাত রংয়ের চা, আন্তর্জাতিক মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান, চা গবেষণা কেন্দ্র, কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ী, মুরইছড়া ইকোপার্ক, গগণ ঠিলা, দোলন চাপা ইকোপার্ক, মৌলভীবাজার সদরের বর্ষীজোড়া ইকোপার্ক, মুন ব্যারেজসহ জেলার বিভিন্ন চা বাগান জীবনধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ যেকোনো পর্যটকের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেবে। তাইতো শীতকালীন সময়ে মৌলভীবাজার জেলার এসব আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত।


দেশের ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপার লীলা ভূমি কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মাঝে সবচেয়ে দর্শণীয়, নান্দনিক ও আকর্ষণীয়। পশুপাখি, বন্য প্রাণীর নিরাপদ আবাস স্থল। এ উদ্যানে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সবুজ বৃক্ষরাজি। বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় জীব উল্লুকসহ কয়েকটি জন্তু ও বিলুপ্ত প্রায় কয়েকটি মূল্যবান গাছ গাছালির শেষ নিরাপদ আবাসস্থল হল লাউয়াছড়া। এই উদ্যান ভ্রমন পিপাষুদের জন্য এখন একটি আকর্ষণীয় স্থান। ১৯৯৬ সালে ১২৫০ হেক্টর এলাকা নিয়ে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়াকে ঘোষণা করা হয় জাতীয় উদ্যান হিসেবে।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানে নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্য মাধবপুর লেক ভ্রমন পিপাসু মানুষের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এখানকার পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলার মাঝে দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিঃমিঃ পানির হ্রদ ও তার শাখা প্রশাখা, চারপাশে পাহাড়ি টিলার উপর সবুজ চা বাগানের সমারোহ, জাতীয় ফুল দুর্লভ বেগুনী শাপলার আধিপত্য, ঝলমল স্বচ্ছ পানি, ছায়া নিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। এক দিনেই মাধবপুর লেকের দৃশ্য উপভোগ করে বেরিয়ে এসে একই রাস্তায় প্রায় ১০ কিঃ মিঃ যাওয়ার পরই বীরশ্রেষ্ট শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ ঘুরে আসা যাবে। এখানে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক, দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন এ স্মৃতিসৌধ দেখতে আসছেন। সকালে বের হলে লাউয়াছড়া ভ্রমণ শেষে মাধবপুর লেক, পদ্মছড়া লেক, পাত্রখলা লেক ও বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ ঘুরে আসা যাবে।


এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরুর সময়ে বিট্রিশ আমলে গড়ে উঠেছে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে বিশালাকার বিমান বন্দর। বর্তমানে এখানে আরটিএস (রিক্রুট ট্রেনিং) স্কুল স্থাপন করায় ভেতরে প্রবেশ করে ভ্রমন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। শমশেরনগর বিমান বাহিনী ইউনিট এলাকায় পতিত ভূমিকে কাজে লাগিয়ে কাঁঠাল, আনারস, লিচু, কুল, ধান, আলুসহ নানা জাতের ফল, কৃষি ও মৎস্য খামার গড়ে তোলা হচ্ছে।

শমশেরনগর বিমান বাহিনীর সংরক্ষিত এলাকা সংলগ্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমির উপর একটি স্মৃতি সৌধও নির্মিত হয়েছে। ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী দূর্গম পাহাড়ি এলাকা ডবলছড়া। ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হওয়া একটি পাহাড়ি ছড়ার নামে স্থানটির নাম হয়েছে বলে জানা যায়। ডবলছড়া খাসিয়া পল্লী যেতে পাহাড়ি উঁচু নিচু কাঁচা ১২ কিঃমিঃ রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। পথিমধ্যে শমশেরনগর চা বাগানের দু’টো প্রাকৃতিক হ্রদ, একটি গলফ মাঠ ও ক্যামেলিয়া ডানকান হাসপাতাল যে কোন পর্যটকের নজর কাড়বে। অপরূপ সৌন্দর্য্যে আধার ডবলছড়া খাসিয়া পল্লীটি পাহাড়ি টিলার উপর ঘর করে বসবাস করছে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকজন। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় সোয়া ২০০ কিঃমিঃ উত্তর পূর্বে ও সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৬০ কিঃমিঃ দক্ষিণ পূর্বে ডবলছড়ার অবস্থান। একজন হেডম্যান বা মন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে ডবলছড়া খাসিয়া পল্লীতে আড়াই শ’ ফুট উপরের হেডম্যান বা মন্ত্রীর বাংলোটি দেখতে খুবই সুন্দর।

কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিঃমিঃ পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকার প্রায় ১০ কিঃমিঃ অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাত। স্থানীয় পাহাড়ি অধিবাসীরা এ জলপ্রপাত ধ্বনিকে হামহাম বলে। তাই এটি হামহাম নামে পরিচিত। সেখানে সরাসরি যানবাহন নিয়ে পৌঁছার ব্যবস্থা নেই। কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিঃমিঃ পাকা রাস্তায় স্থানীয় বাস, সিএনজি, জিপ ও মাইক্রোবাসে যেতে হয়। বাকি ১০ কিঃমিঃ পায়ে হেঁটে যেতে হয়। সেখান থেকে প্রায় ৫ কিঃমিঃ দূরে সীমান্ত এলাকায় ত্রিপুরা আদিবাসী পল্লী। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা তৈলংবাড়ী কলাবন বস্তি থেকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা হতে হবে। প্রায় ৬ কিঃমিঃ পাহাড় টিলা ও ২ কিঃমিঃ ছড়ার পানি অতিক্রম করে ৩ ঘন্টা পায়ে হাঁটার পর ১৬০ ফুট উচ্চতার হামহাম জলপ্রপাতের দেখা পাওয়া যাবে। হামহাম জলপ্রপাত ভ্রমণ করতে পুরো একদিনের প্রয়োজন।

এছাড়াও ভ্রমণের জন্য রয়েছে-কমলগঞ্জে পাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের নিরব স্বাক্ষী বিভিন্ন বধ্যভূমি, ব্রিটিশদের শোষনের প্রতীক তিলকপুর নীলকুটি, ঘটনাবহুল মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড, বর্ণময় শিল্পসমৃদ্ধ মনিপুরী সম্প্রদায়সহ টিপরা, খাসিয়া, গারো সমাজের ক্ষদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তা এলাকা সমূহ।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ‘দীর্ঘদিন পর এই শীত মৌসুমে সকল ধরনের পর্যটন ব্যবসায় আশানোরুপ ভালো হয়েছে। পর্যটন শিল্প নিয়ে যে হতাশা ছিলো তা কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করলে আগামীতে আরও পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।’

কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টার থেকে জানা যায়, ‘গত দুই সপ্তাহে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় ২৫ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক রয়েছেন। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ টাকা।’

শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের টুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সকল পর্যটন স্পটগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছি।’

মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় বলেন, ‘এ জেলায় শীত মৌসুমে অনেক বেশি পর্যটক আসেন। পর্যটকেরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করে বাড়ি ফিরতে পারেন সেই ব্যাপারে পর্যটন পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। 

তিনি বলেন, ‘পর্যটন স্পটে যাতে কোন পর্যটন হয়রানির শিকার না হয় সে জন্য স্পটগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

যেখানে থাকবেন
এখানে থাকা-খাওয়ার জন্য শ্রীমঙ্গলে ফাইভ স্টার হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান অ্যান্ড গলফ, কুলাউড়া উপজেলায় সিআরপি রেস্ট হাউজ, মৌলভীবাজার সদরের দুসাই রিসোর্ট, গগণঠিলা, কমলগঞ্জের হীড রেস্ট হাউস, বনবিভাগের রেস্ট হাউসসহ স্থানীয় ডাকবাংলোসহ সব উপজেলাগুলোতে সব শ্রেণীর মানুষের জন্য অর্ধশতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের ব্যবস্থা আছে।

যাতায়াত
ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া স্টেশনে নামতে হবে। বাসে আসলে শ্যামলী, রূপসী বাংলা, এনা, সাদ্দাম. রুপালী বাংলা পরিবহনে এসে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলায় নামতে পারেন। এরপর সিএনজি, বাস, অটোরিকশায়, ট্যাক্সি করে পর্যটন স্পটগুলোয় যাওয়া যায়। প্রতিটি পর্যটন স্পটে পর্যটন গাইডও রয়েছে।

এসআর
Related topic   Subject:  মৌলভীবাজার  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close