অদ্রীজ মা-বাবার অত্যন্ত আদরের সন্তান। লেখাপড়ায়ও খুব ভালো। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। কিছুদিন হলো বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অদ্রীজ অধির আগ্রহে বসে আছে কখন তার হাতে নতুন বই আসবে। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না তার। তাকে তার মা বললেন কি হয়েছে বাবা তোমার? সে বলল আমি নতুন বই এর অপেক্ষায় আছি। মা-বাবা হেসে বললেন এইতো তুমি তোমার হাতে নতুন ক্লাসের বই পেয়ে যাবে।
কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষের শুরুতে পাঠ্যবই হাতে পেত না এক দশক আগেও। বই পেতে কখনও কখনও তিন থেকে চার মাস লেগে যেত তাদের। তবু শিশুদের অপেক্ষার প্রহর ফুরাত না। পাল্টে গেছে সেই চিত্র। বর্তমানে শিক্ষার্থীর হাতে ঝকঝকে ছাপা রঙিন বই দেওয়া হচ্ছে। ফলে বই সংগ্রহ করার দিনটি শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক আকাঙ্ক্ষার এবং আনন্দের।
২০১০ সাল থেকে সরকার প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের ০১ জানুয়ারিতে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছু বই পৌঁছানো সম্ভব হলেও সম্পূর্ণ বই পেতে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৫১ হাজার ৭৮৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হবে। তবে বছরের শুরুতেই সব বই হাতে পাবে না শিক্ষার্থীরা। দেশের উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাঠ্যবইয়ে সংযোজন ও বিয়োজন এবং পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি হওয়ায় এর মূল কারণ।
জানা যায়, আগামী শিক্ষাবর্ষে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রচলিত কারিকুলামের বই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হলেও এসব বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে কন্টেন্টে নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে তা পরিমার্জন করা আর নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পুরানো কারিকুলামের বই দেয়ার কথা বলা হলেও তাতেও আসবে নানা পরিবর্তন। আর মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ আবার চালু হওয়ায় বাড়ছে বইয়ের সংখ্যাও।
প্রতি বছর সাধারণত জুলাই-আগস্ট থেকে পাঠ্য বই ছাপার কাজ শুরু হয়। এরপরও ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বই দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু এ বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এনসিটিবিতে অনেক পরিবর্তন আসে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্য কর্মকর্তারা বদলি হন। এরপর আবার নতুন শিক্ষাক্রম বদল করে আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়া হয়। পাঠ্যক্রমেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ বছর পাঠ্য বইয়ের কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে। এরপর আবার পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে অনেক সময় চলে গেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে সম্পূর্ণ বই না পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. এনায়েত বারী ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'নতুন রঙিন বই শিশুদের বই পড়ার আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। দেশের সামগ্রিক শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ, দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই বিতরণ ও নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার পদক্ষেপ, শত চ্যালেঞ্জের মাঝেও সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদন বিশ্বে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বছরের শুরুতে শিশুদের মাঝে বই বিতরণের ফলে সবার মাঝে একটা উৎসব বিরাজ করে। শিশুরা সারা বছর এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে। বই উৎসবের প্রধানতম সফল একটি দিক হলো শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করা। সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। নতুন শ্রেণি, নতুন বই। এটি শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রেরণা জাগায় এবং উৎসাহ সৃষ্টি করে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারকে শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে নতুন বই দেওয়ার অনুরোধ জানাই।'
কবে নাগাদ কোটালীপাড়ায় বই আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'বই নিয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তেমন কোনো কথা হয়নি। এ জন্য সঠিক ভাবে বলতেও পারছি না এই মুহূর্তে। যতটুকু জেনেছি। এখনো কাজ চলছে। তবে চলতি বছরে উপজেলার ৩১ হাজার ৯২৫ জন শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে।'
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক নুর আলম ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'পরিবর্তনের কারণে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে। যার কারণে এখনো পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের ভেতর আমরা বই পেয়ে যাবো। চলতি বছরে উপজেলার ১৯ হাজার ৮৬২ জন শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। তবে কবে নাগাদ সম্পূর্ণ বই আসবে তা সঠিক জানা নেই।'
এমএ