কক্সবাজারের টেকনাফে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া শিশু রাফিকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মজিদের আদালত এ আদেশ দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোহাম্মদ ইউনুছ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জামিন পাওয়া ওই কিশোর শিশু একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা জনপ্রতিনিধি এবং উপজেলা যুবলীগের সদস্য।
আইনজীবী মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলছাত্রের আইনজীবীরা আদালতে জামিন আবেদন করেন। পরে শুনানিতে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে আদালত আসামির বয়স ও চলমান বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচী বিবেচনায় স্থায়ী জামিন আদেশ দেন।
এ দিকে পুলিশের অভিযানে যুবলীগ নেতাকে না পেয়ে তার শিশু ছেলেকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে অভিযোগে এনে বুধবার হাইকোর্টে আইন ও শালিস কেন্দ্রের পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়।
এ নিয়ে পিপি ইউনুছ বলেন, আদালত ওই রিট আবেদন আমলে নিয়েছেন। পরে শুনানিতে স্কুলছাত্রের জামিন এবং টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাপারে নিজের আইনগত অবস্থানের বক্তব্য উপস্থাপনের আদেশ দিয়েছেন।
গত ২৯ নভেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানিয়েছিল, ‘২৬ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে এ অভিযান চালানো হয়। সে সময় একটি বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে দুইজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একজনকে আটক করা হয়। পরে তার হাতে থাকা একটি নীল রংয়ের শপিং ব্যাগের ভেতর একটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি গুলি এবং ৪০টি নীল রংয়ের কার্তুজ পাওয়া যায়। পরে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তা জব্দ করা হয়। অস্ত্রটি ওই কিশোরের বাবা তাকে পাশের বাড়ির পেছনে লুকিয়ে রাখার জন্য দিয়েছিলেন। কিশোরের বাবা সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। এ ঘটনায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল।’
কিন্তু এ নিয়ে স্কুলছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, তার বাবার রাজনৈতিক ও নির্বাচনি প্রতিপক্ষের যোগসাজশে পুলিশ অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তারের নাটক সাজিয়েছে। মূলত রাজনৈতিক উদ্দ্যেশে অভিযান চালিয়ে বাড়িতে বাবাকে না পেয়ে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে অভিযোগ তাদের।
শিশুটির বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘মূলত রাজনৈতিক এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার শিশু ছেলেকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে।’
এ দিকে ওই শিশুর জামিনের বিষয়টি হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষ অবহিত করার পর আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দায়ের করা রিটটি রোববারের কার্যতালিকায় নেওয়া হয়েছে।
এর আগে শিশুটির গ্রেপ্তারের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন বুধবার সকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি তুলে ধরেন।
এ ব্যাপারে বিকালের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
বিকালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান আদালতে বলেন, ‘এক দিনের মধ্যে হালনাগাদ তথ্য জানানো যাবে আশা করছি।’
এর মধ্যে শিক্ষার্থীকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি, তা নিশ্চিত করতে তাকে আদালতে হাজির করতে ও মুক্তি দিতে নির্দেশনা চেয়ে বুধবার রিট করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তানিম খান আদালতকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী জামিন পেয়েছে। বের হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।’
এফএ/এসআর