রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা মো. তারেক নুর এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহমেদসহ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা হয়েছে।
গত সোমবার রাজশাহী জেলা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগীর ছোট ভাই মো. রোকনুজ্জামান (২৬)।
রাবি প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল কমিউনিটির সদস্য সরদার হাসান ইলিয়াছ তানিমের ওপর হামলার ঘটনায় এ মামলা হয়।
মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ জানুয়ারির মধ্যে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসের কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে মামলা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান রোকনুজ্জামান।
মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগের তৎকালীন রাবি শাখার সভাপতি ও সদ্য বিলুপ্ত হওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী ওরফে আহম্মদ আলী মোল্লা (৪২), তৎকালীন রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবু হোসাইন ওরফে আবু হোসাইন বিপু (৩৭), তৎকালীন মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রুহুল আমিন বাবু (৩৮), তৎকালীন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আল আরাফাত রাব্বি (৩৪), রাবির ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম (৩৫) ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন (৩৫)।
সংবাদ সম্মেলনে মো. রোকন উজ্জামান বলেন, ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট বাবির সৈয়দ আমীর আলী হলের স্টোর রুম থেকে ককটেল উদ্ধারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে আমার বড় ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। ছাত্রলীগ ক্যাডার রুহুল আমিন বাবু হকিস্টিক দিয়ে তাকে পিটিয়ে জখম করে। এ ছাড়াও তাকে ইট দিয়ে মাথা ও মুখে আঘাত করে হলের সামনে থাকা পানির কুয়ার মধ্যে ফেলে চুবিয়ে ধরে রাখে। তখন পানি থেকে উঠিয়ে আসামি আব্দুল আলীম, আল আরাফাত রাব্বি, আহম্মদ আলী মোল্লা এবং আবু হোসাইন বিপু রড ও জিআই পাইপ দিয়ে ভুক্তভোগীর পিঠে, কোমরে ও পায়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এমনকি আসামি কামাল হোসেন ও আহম্মদ আলী মোল্লা ভুক্তভোগীর পকেটে থাকা মুঠোফোন ও হাতে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, এসময় ভুক্তভোগী নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য আকুতি মিনতি করেন। তবে, তারা সাহায্য করার পরিবর্তে তার উপর হামলার নির্দেশ দেয়। তাদের মৌন সম্মতি পেয়ে দ্বিতীয়বার রড ও হকিস্টিক দিয়ে সাংবাদিক হাসানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তার সহকর্মী সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় মামলার বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের ছোট ভাই বলেন, দীর্ঘদিন দেশে আইনের শাসন না থাকায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরিবারের পক্ষে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তাই আপনাদের মাধ্যমে আমি আমি মহামান্য আদালত এর নিকট আমার ভাইয়াকে হত্যাচেষ্টাকারী আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর (পরবর্তীতে উপ-উপাচার্য) চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী প্রক্টর তারেক নূর ও সাবেক সহকারী প্রক্টর মুস্তাক আহমেদ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন সহকারী প্রোক্টর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক নূর বলেন, আমার দায়িত্বপালনকালে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। আমি আমার দায়িত্ব পালনে কোনো রাজনৈতিক দলকে এমন কোনো সম্মতি দেইনি।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক মুস্তাক আহমেদ বলেন, আগস্টের ৫ তারিখের পরে তো সব রিস্টার্ট হয়ে গেছে। এর পরে কত বিষয় ‘কেচো খুড়ে’ বের করা হচ্ছে। ১৩ বছর আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে নেই। আর যে সাংবাদিককে মারার অভিযোগ উঠেছে তাকে আমি চিনি না ও জানি না। বরং, আমরা আরও সাংবাদিকরা কিভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট ছিলাম।
আরেক অভিযুক্ত সাবেক প্রোক্টর (পরবর্তীতে উপ-উপাচার্য) বর্তমান রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া ফোন রিসিভ করলেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
অন্যদিকে অভিযুক্ত কোনো ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মামলার বিষয়ে মহানগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, মামলার কাগজপত্র এখনও থানায় আসেনি। তবে, কাগজপত্র হাতে পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
এফএ/এসআর