পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মুঘল আমলের অন্যতম এক নিদর্শন উপজেলার রানীপুর গ্রামে অবস্থিত ৩০০ বছরের পুরানো মিঞা বাড়ি শাহী জামে মসজিদ। কালের বিবর্তনে এলাকায় ধীরে ধীরে ‘মিঞা বাড়ির মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে মসজিদটি।
তবে সঠিক তদারকি, সংস্কার ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এর সৌন্দর্য্য। অযত্নে অবহেলায় ঝোঁপঝাঁড়ের মধ্যে পড়ে থাকা মোগল আমলের মুসলিম ঐতিহ্যের প্রাচীন ও অন্যতম নিদর্শন এ শাহী মসজিদটি।
উপজেলা সদর সুবিদখালী থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে রানীপুর মিঞা বাড়ির অবস্থান। রানীপুর মহাসড়ক থেকে মসজিদ যেতে মাত্র ৫-১০ মিনিটের পথে রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। পথিমধ্যেই সাঁকো পার হয়ে যেতে মসজিদটি।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, এই মিয়া বাড়ি ছিল মুঘল আমলের শিবন খার জমিদারির একাংশ। রানীপুর মিয়াবাড়ির জমিদার ছিলেন আরমান আলী শাহী। তিনি মজিদটি নির্মাণ করেন এবং তার নাম অনুসারে এই মজিদের নাম রাখেন শাহী জামে মসজিদ। কিন্তু বর্তমানে জমিদার আরমান আলীর বংশধরদের নানাবিধ সমস্যার কারণে সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় মসজিদটি এখন সৌন্দর্য্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এক গম্বুজ বিশিষ্ট মিঞা বাড়ির আরমান আলী জামে মসজিদটি চুনসুরকি দিয়ে নির্মিত। মসজিদটির মূল ভবন চারপাশে ২০০ বর্গফুট বিশিষ্ট। উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। চার কোণায় চারটি মিনার, মাঝে আটটি ছোট মিনার ও মাঝখানে বড় একটি মিনার রয়েছে। মসজিদের সামনের দিকে ও উত্তর পাশে একটি করে দরজা রয়েছে। একতলা মসজিদটি নিখুঁত কারুকার্যবেষ্টিত। মসজিদের ভেতরে ৩০ থেকে ৪০ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের ভেতরের ও বাইরের পলেস্তরা খসে পড়ে চুন-সুরকি বেড়িয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়ালে শেওলা জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে মসজিদের সৌন্দর্য্য। মসজিদের বাইরের দিকে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যখচিত (সাদা রংঙের ফুল আঁকা) মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। মসজিদের পূর্ব পাশে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে একটি ঘাট বাঁধানো বড় দীঘি রয়েছে। মুসল্লিরা এখানে ওজু ও গোসল করেন। সুপরিকল্পিত ভাবে মসজিদটি নির্মিত হলেও সঠিক তদারকির অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে মসজিদটি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়কারী মুসুল্লী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মসজিদটি দ্রুত সংস্কার করলে আরো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। একযুগ আগে একবার সংস্কার করা হয়েছিলো। তা একালের ইট-বালি ও সিমেন্টের সাথে মেলে না। এর পাশেই রয়েছে দুটি পুরানো বাড়ির ধংশাবশেষ। পুরাতন এ বাড়ি দুটি জংগলে ঢাকা পড়েছে। এখানে আসার রাস্তাটাও ভালো না। তাই দর্শনার্থীরাও আসতে পারেন না।
বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ইসলামি স্থাপত্যশিল্প হিসেবে টিকে থাকবে বহুদিন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অবহেলার কারণে মিঞা বাড়ির মসজিদটির সৌন্দর্য্য বিলুপ্তি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে মিঞা বাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময়ে মসজিদটি সংস্কার করেছেন।
মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউসুফ বলেন, ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা শৈল্পিক স্থাপনাজুড়ে এই মসজিদটিতে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। মসজিদের দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই এই মসজিদটি দেখতে আসেন। রোজার মাসে এখানে রোজাদারদের জন্য ইফতারির সুব্যবস্থা থাকে। মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুরানো নকশা অক্ষুন্ন রেখে সংস্কার প্রয়োজন। প্রাচীন এই স্থাপনার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই মসজিদটি সংস্কারের দাবি জানাই।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পুরোনো যেকোনো কিছু আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে আমাদের কাছে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খোঁজখবর নিয়ে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
-কেবি/এমএ