ফেনীতে বন্যার ক্ষত কাটিয়ে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও যাতায়াতের দুর্দশা এখনো কাটেনি। বিগত আগস্ট মাসে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফেনী-সোনাইমুড়ী সড়ক বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফেনীর পশ্চিমাঞ্চল, নোয়াখালীর পূর্বাঞ্চল কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটি বেহাল দশার কারণে জনগণের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী-সোনাইমুড়ী সড়কের ফেনী অংশের তালতলা থেকে গণিপুর পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া নোয়াখালী অংশেও সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানিতে ডুবেছিল। তখন ৭-৮ দিন বন্ধ ছিল যানবাহন চলাচল। মানুষ বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলাচল করেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা সড়ক দিয়ে পানিবন্দী মানুষজন উদ্ধার ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো এবং জরুরী প্রয়োজনে মানুষ চলাচলে একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রাক, ট্রাক্টর ও ভারী যানবাহন। এসব চলাচলের কারণে সড়কের পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। খানা-খন্দে ভরে সড়কটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দুই মাসেও মেরামত না হওয়ায় যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের।
ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলে ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কটি ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার সংযোগ সড়ক হিসেবে খ্যাত। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই সড়ক ফেনী অংশে ১৪ কিলোমিটার, নোয়াখালী অংশে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই অঞ্চলের জনগণের কাছে বিশ্বরোড নামে খ্যাত সড়কটির বেহাল দশার কারণে চলাচলকারী প্রায় ৭/৮ লক্ষ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ সড়কের পাশে আছে বিরলী বাজার, রাজাপুর বাজার, গণীপুর বাজার, রতনপুর বাজার, কোরাইশমুন্সী বাজার, সিন্দুরপুর বাজার, অলাতলী বাজার, দরবেশের হাট বাজার, গাজিরহাট বাজার, কানকিরহাট বাজার। এছাড়াও দোকান, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে জরুরী প্রয়োজনে এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে খুবই ঝুঁকি নিয়ে। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্তের কারণে বিকল হচ্ছে যানবাহন এবং দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
স্থানীয় রাজাপুর ইউপি সদস্য ও ব্যবসায়ী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতে সুস্থ লোকও অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশেষ করে কোনো মুমূর্ষু রোগী, গর্ভবতী নারীকে জরুরি অবস্থায় জেলা হাসপাতালে নিতে হলে অনেক পথ ঘুরে এলাহীগঞ্জ হয়ে নিতে হয়। এতে তিনগুন বেশি ভাড়া গুনতে হয়। দৈনন্দিন মালামাল নিয়ে শহর থেকে গ্রামে যাতায়াতে সময়ক্ষেপণ ও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে।
এলাকার ঐতিহ্যবাহী দরবেশহাট পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ জহিরুল হক জনি বলেন, বন্যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির অবস্থা এতই খারাপ যে, জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ জনসাধারণ যারা এ পথে যাতায়াত করেন বা জেলা হেডকোয়ার্টারে যাতায়াত করতে হয়, তাদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় ও ভাড়া দিতে হয়।
সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী ফেনী দারুচ্ছুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা সুপার রহিমা বেগম বলেন, সড়কটি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর বিগত দুই মাসেও সংস্কার কাজ না করায় এবং বৃষ্টির কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে নিয়মিত চলাচলকারীদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় ও শারীরিক অসুস্থতাসহ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দরবেশের হাট পাবলিক কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া সুলতানা বলেন, সড়কটির বেহাল দশার কারণে নিয়মিত কলেজে যাতায়াতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করে আমাদের কষ্ট লাঘবে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিশিষ্ট সমাজসেবক কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, এটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ, সিএনজিসহ স্বল্প ও ভারী যানবাহন চলাচল করে। সড়কের কিছু কিছু অংশ একদমই চলাচলের অনুপযোগী। বাকি অংশটুকু গর্তে ভরপুর। জনগণের কষ্ট লাঘবে অনতিবিলম্বে মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।
ফেনী পশ্চিমাঞ্চল কমিউনিটির প্রচার সম্পাদক শাহজালাল ভূঁইয়া বলেন, এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বর্তমানে মহাবিপাকে পড়েছেন। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি জমে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, সড়কে হাঁটাও যায় না। সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে ডোবা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কর্তৃপক্ষের নজর নেই। সড়কটি দ্রুত মেরামতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
ফেনী উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ভূঁইয়া বেলাল বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এ সড়ক দিয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ ও যান চলাচল বিলম্ব হচ্ছে। এতে জেলা হেডকোয়ার্টারের সাথে জনগণের চিকিৎসা ও দাপ্তরিক কাজে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির পূর্ণাঙ্গ মেরামত হওয়া প্রয়োজন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমাদের অনেকগুলো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক বরাদ্দের ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে মেরামত হচ্ছে। ফেনী-সোনাইমুড়ি সড়কের মেরামতের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান আছে। অপরদিকে মেরামত কার্যক্রম চলছে। আশা করা যায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সড়কটি মেরামত করে জনভোগান্তি নিরসন করা হবে।