জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মহানগরীর তালাইমারি এলাকায় বাসার শয়নকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন মো. রাজ নামে এক যুবক। তার বাবা আজিজুল হক বলেন, পলিটেকনিকে ভর্তির পর একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় রাজ। আমরা বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। মেয়ের বাপ-মা মেনে নেয়নি। উলটো একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে রাজকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। দুই মাস জেল খেটে বেরিয়ে আসলেও ছেলের আর পড়াশোনা হলো না।
তিনি আরও বলেন, বছর খানেক থেকে আমাদের সঙ্গে রাজের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, কথাবার্তা কম বলত; বাসায় আসত, খাইত, বাইরে চলে যেত। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকত।
শেষ দিনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজের মা। তিনি বলেন, আমার ভালো ছেলে, ডিম ভাজলাম, খেতে দিলাম, ডিম দিয়ে রুটি খেল, ঘুমাইল। ছেলে যে আমার চিরতরে চলে যাবে ভাবতে পারিনি, আমি সহ্য করতে পারছি না।
তানোরের বহরইল এলাকা থেকে গত ২৫ মার্চ সকালে জান্নাতুন খাতুন (১৭) নামে এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে ওই এলাকার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এক ছেলের সঙ্গে জান্নাতুনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় সে গাছে উঠে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘লফস’ জানায়, গত বছর রাজশাহীতে আত্মহত্যা করেন ৩২ জন। এর মধ্যে ১৩ জন শিশু ও ১৯ জন নারী। কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, পারিবারিক কলহ, যৌতুক, পরকীয়া, পরীক্ষার খারাপ ফলাফল ও প্রেমঘটিত বিষয়কে উল্লেখ করছে সংস্থাটি।
লফস রাজশাহীর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. সালাউদ্দীন জানান, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আত্মহত্যার এসব কারণ পেয়েছি। বাল্যবিবাহ বড় ফ্যাক্ট, প্রেমও বড় একটি কারণ।
সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে ‘স্বপ্নবাজ’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমানুল্লাহ আমান বলেন, সেরোটোনিন নামে মানুষের মস্তিষ্কের এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে বিষণ্নতা বা হতাশা, দুশ্চিন্তা ও অনিদ্রাসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। জীবনযাপনের সঙ্গে এই সেরোটোনিন কমবেশি হয়। সেজন্য প্রফুল্ল থাকতে হবে। অন্যের কটুকথা বা সমালোচনায় ঘরকুনো হয়ে বসে না থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যর্থতা থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করলে জীবনকে উপভোগ করা সম্ভব।