For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০

Published : Monday, 30 October, 2023 at 10:25 PM Count : 219

মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে টানা ২য় দিনের মতো রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার-আশুলিয়াবিক্ষোভ করেছেন তৈরী পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় তারা দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের উপর রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপসহ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করলে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত ২০ কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়।

আহতদের মধ্যে কয়েকজন হলেন, এনভয় গার্মেন্টসের শ্রমিক নজরুল ইসলাম, ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের শ্রমিক সীমা আক্তার, পথচারী বিমল শীল ও মজনু মিয়া। বাকি আহতদের তথ্য দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা একসঙ্গে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা বেতনের দাবিতে বিভিন্ন কারখানার প্রায় তিন-চার হাজার শ্রমিক আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়ক অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ করে অন্তত ১০টি কারখানার শ্রমিকরা। আন্দোলনে সমর্থন না দেওয়ায় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা হা-মীম গ্রুপের নেক্সট কালেকশনস লিমিটেড-১ কারখানায় প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় কারখানার ব্যবস্থাপক সাহাবুদ্দিন ও ১ নম্বর গেটের সিকিউরিটির দ্বায়িত্বে থাকা ইনচার্জ নিতাই কোয়ালিটি ইনচার্জ মো. তাইজুল উদ্দিনসহ অন্তত ২০ আহত হন। কারখানার ব্যবস্থাপক সাহাবুদ্দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ম্যানেজার হারুন-অর রশিদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেক্সট কালেকশনস লিমিটেডের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা আসেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত চার থেকে পাঁচ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া, দাবি আদায়ে শ্রমিকরা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া ও বেরন এলাকায় সড়কে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখায় পুলিশ টিয়াসেল নিক্ষেপ করে তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় প্রায় ঘন্টাব্যাপী শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ জলকামান ব্যবহার ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে জামগড়া এলাকার সেতারা, এনভয়, দি রোজ, ভার্চুয়াল, এম ডিজাইন, উইন্ডি, পাইওনিয়ারসহ ছয়তলা এলাকার প্রায় সব পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে, জামগড়া এলাকার এনভয় গ্রুপ গার্মেন্টসের আয়রন ম্যান মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার (৩৫) পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন। তাকে দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

গুলিবিদ্ধ নজরুলের বোন শিউলি বেগম বলেন, 'আমার ভাই রাত্রিকালীন ডিউটি শেষে সকালের দিকে বাসায় যাওয়ার জন্য গার্মেন্টস থেকে বের হয়। এ সময় অন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে পুলিশ গুলি করলে আমার ভাইয়ের মাথায় একটি গুলি লাগে। চিকিৎসক জানিয়েছেন আমার ভাইয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদেরকে রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বেশ কিছু কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।'

অন্যদিকে, একই দাবিতে সাভারের হেমায়েতপুরের পদ্মার মোড় এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তারা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে ঘণ্টাব্যাপী পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারগ্যাস গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়।
 
পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা কাজে যোগদানের পর পরই কারখানার ভেতরে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা বের হয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশের তাড়া খেয়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন অলিতেগলিতে অবস্থান নেয়। এরপর সুযোগ বুঝে তারা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। 

আন্দোলনরত শ্রমিক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সকালে সবাই কারখানায় প্রবেশ করলেও মেশিন বন্ধ করে বসেছিলেন তারা। একপর্যায়ে অন্য কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে সড়কে নামলে তারাও সড়কে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের সরিয়ে দিয়েছে।'

আন্দোলনরত অপর শ্রমিক জামাল হোসেন বলেন, 'সাড়ে নয় হাজার টাকা বেতন পাই। এ দিয়া চলা যায় না। সবকিছুর দাম বাড়তি। তাই বেতন বাড়ানোর জন্য সবাই সড়কে আইছে।'

বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা জানান, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সড়কে নামলে পুলিশ, বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে। শ্রমিকদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। বহিরাগতরা প্রকাশ্যে রামদা হাতে খোলা প্রাইভেটকারে এলাকায় টহল দিচ্ছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, 'মূলত মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে বলে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি। বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।'

সাভার চামড়া শিল্প নগরী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রাসেল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বেতন ভাতার দাবিতে সোমবার সকাল ৮টার দিকে হেমায়েতপুর পদ্মার মোড়ের দীপ্ত অ্যাপারেলস কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করেন। এ সময় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, ব্যাবিলন গ্রুপ ও একেএইচ গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মধ্যেও উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ ও ব্যাবিলন গ্রুপ কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানাও ছুটি ঘোষণা করে।'

-ওএফ/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,