For English Version
বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হোম

বাউফলে বড় ২ দলে একাধিক প্রার্থী

Published : Tuesday, 24 October, 2023 at 7:12 PM Count : 501

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দূর্গ  হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসন থেকে সর্বাধিক সাত বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এই আসনের বর্তমান এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় একাধিকবার বিদ্রোহ মোকাবেলা করে বার বার এমপি নির্বাচিত হওয়া আ স ম ফিরোজ আসন্ন নির্বাচনে ফের ৮ম বারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী।

এদিকে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কাজে লাগিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে বিএনপি।

এ আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক মোট সাত বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রিকশা মার্কা নিয়ে একবার এমপি নির্বাচিত হন। বাকি ছয় বার তিনি নৌকা মার্কা নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। 

জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে তিনি জড়িয়ে আছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ ও চিফ হুইপ ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সততা ও যোগ্যতার বিবেচনায় আ স ম ফিরোজকে দক্ষিণ জনপদে রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনী এলাকায় আ স ম ফিরোজের রয়েছে সুসংগঠিত কর্মী বাহিনী। ভোট রক্ষা কমিটিও রয়েছে তার। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার জ্যেষ্ঠ ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক রায়হান সাকিব। আ স ম ফিরোজের ক্লিন ইমেজ নিয়ে মাঠের রাজনীতিতে তিনি ভালো অবস্থানে রয়েছেন বলে তার অনুসারীরা মনে করছেন। তিনি কোনো প্রতিহিংসামূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না বলেই এ আসনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও সহাবস্থান করছেন।

তবে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আ স ম ফিরোজকে পরাজিত করে বিএনপির প্রার্থী সহিদুল আলম তালুকদার এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৬ সালে বিএনপির এই প্রার্থী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ স ম ফিরোজের সঙ্গে মাত্র ২৬ ভোটে হেরে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাউফল আসনে আওয়ামী লীগে বিভক্তি রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান এমপি ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র মো. জিয়াউল হক জুয়েল।

এ আসনে আ স ম ফিরোজ ছাড়াও পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র মো. জিয়াউল হক জুয়েলও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ২০১২ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০২০ সালে দ্বিতীয়বার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র জুয়েল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ'র আস্থা ও বিশ্বাসভাজন লোক হিসেবে পরিচিত। জিয়াউল হক জুয়েলের মনোনয়নের ব্যাপারে তার অনুসারীরা আশাবাদী।

অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার এক সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর যুবলীগের সভাপতি হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, এরপর তিন বার দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে পালন করেছেন। নিজ এলাকা বগা ইউনিয়ন পরিষদে তিনি তিন বার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও মনোনয়ন নিয়ে আশাবাদী।

দলীয় একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, রাজনীতিতে আবদুল মোতালেব হাওলাদারের যতটুকু অর্জন তার সবটুকুর অবদান আ স ম ফিরোজ এমপির। এখন আ স ম ফিরোজেরই প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন তিনি। সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আবদুল মোতালেব হাওলাদার পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। যদিও ফেসবুকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি করে দলীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন  আবদুল মোতালেব হাওলাদার।

এ আসনে আ স ম ফিরোজ এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার, মেয়র জুয়েল ছাড়াও বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শামসুল আলম তালুকদারের ছেলে হাসীব আলম তালুকদার, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুল হক রেজা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম, চুয়েটের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর ফিরোজ খাননুন ফরাজী, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জোবায়দুল হক রাসেল ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হাসান সুপ্ত মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

অ্যাডভোকেট খোন্দকার শামসুল হক রেজার বাবা মরহুম আবদুল আজিজ খোন্দকার এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালে এমপি নির্বাচিত হন। বাবার আদর্শকে লালন করে খোন্দকার শামসুল হক রেজা রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এলাকায় তিনি একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। 

২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আ স ম ফিরোজ ও তাকে যৌথ ভাবে মনোনয়ন প্রদান করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের মূল প্রার্থী আ স ম ফিরোজের মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। একই ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালেও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আ স ম ফিরোজ ও  খোন্দকার শামসুল হক রেজাকে যৌথ ভাবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়। পরে একই ভাবে তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন নেন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

হাসীব আলম তালুকদারের বাবা প্রয়াত সামসুল আলম তালুকদার স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন। তার পরিবারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ রয়েছে। বীরউত্তম সামসুল আলম তালুকদারের ছেলে হাসিব আলম তালুকদার বেশ কয়েক মাস হয় এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। শীতবস্ত্র বিতরণ, দুঃস্থ মানুষকে সহায়তা, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্নপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। তবে বাউফলের রাজনীতিতে তিনি নতুন মুখ। তার বাবার সুখ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজ আলমের বাবা আবদুল গফুর মিয়া বাউফল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। একত্রে ভারতে পড়াশোনা করেছেন। এই সম্পর্কের দাবি নিয়ে ফিরোজ আলম আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। দান-অনুদান দিচ্ছেন। তিনি একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি।

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জোবায়দুল হক রাসেল ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হাসান সুপ্ত এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। তারাও দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।

এদিকে, বিএনপি থেকে সাবেক এমপি সহিদুল আলম তালুকদার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন মনোনয়ন চাইবেন। মুনির হোসেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে পরিচিত মুখ। তিনি এলাকায় এসে তার অনুসারীদের নিয়ে মাঠ গোছানোর কাজ করছেন। মুনির হোসেনের বাবা পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। 

শহিদুল আলম তালুকদার ১৯৯৬ সালে বিএনপির মনোনয়ন পান। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে মাত্র ২৬ ভোটে পরাজিত হন। তার কারণেই এ আসনে বিএনপির নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পেরেছে। এরপর ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে পুনরায় বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হন। আইনি জটিলতার কারণে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হলে তার পরিবর্তে বিএনপি থেকে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ স ম ফিরোজের কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালে বিএনপির সাবেক এমপি সহিদুল আলম তালুকদারের স্ত্রী সালমা আলম লিলিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনিও পরাজিত হন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ফারুক তালুকদার বাউফল বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারি হিসেবে নেতাকর্মীর মাঝে পরিচিত। বিগত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ স ম ফিরোজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫৬ হাজার ভোট পান। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তিনিও মনোনয়ন চাইতে পারেন। 

এছাড়াও, বিএনপি থেকে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটু এবার মনোনয়ন চাইবেন।  

এ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ মনোনয়ন চাইবেন।

এলাকায় জামায়াতের অনেক ভোট রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের আসন ভাগাভাগি হলে এ আসনে তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে তার অনুসারীদের দাবি।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,