২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছে গ্রামীণফোন। বুধবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গ্রামীণফোনকে এ সম্মাননা প্রদান করে।
এ নিয়ে টানা সাত অর্থবছর টেলিযোগাযোগ খাতের সর্বোচ্চ করদাতার এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে সম্মননা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দেশে সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিতে উপস্থিত অতিথিদের গ্রামীণফোনের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।
এ সময় গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মো. আরিফ উদ্দিন এবং প্রতিষ্ঠানটির হেড অব করপোরেট ট্যাক্স মো. মহসিনও উপস্থিত ছিলেন।
২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণফোন দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা প্রত্যক্ষ কর এবং এক হাজার ১৫৮ কোটি টাকা উইথহোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে জাতীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে। নিজেদের যাত্রার শুরু থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণফোন জাতীয় কোষাগারে মোট এক লাখ তিন হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা দিয়েছে। যার মধ্যে ৭২ হাজার ৮৬ কোটি টাকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর হিসেবে এনবিআরকে প্রদান করেছে; এর মধ্যে ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা উইথহোল্ডিং ট্যাক্স এবং বিটিআরসিকে দিয়েছে ২০ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, টানা সাত বারের মতো টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রামীণফোনকে সেরা করদাতা পুরস্কারে সম্মানিত করার জন্য আমরা এনবিআরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশ আজ যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে তার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সব নাগরিককে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অনুকরণীয় একটি উদাহরণ, যা প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। দেশের ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, তবে দুর্ভাগ্যবশত এই বিশেষ দিনে আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত কোয়ালিটি অফ সার্ভিস মানদণ্ড পূরণ করা সত্ত্বেও নতুন গ্রাহকদের সেবা দিতে পারছি না। এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি। এতে এনবিআর শুধু কর রাজস্বই হারাবে না পাশাপাশি কানেক্টিভিটি এবং ডিজিটাল সল্যুশনের ওপর নির্ভরশীল অন্য সব খাতে এর প্রভাব পড়বে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সিম বিক্রির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে, কেননা এ নিষেধাজ্ঞা কর রাজস্ব এবং স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধার সৃষ্টি করবে।’
গ্রামীণফোন জানায়, গত জুনে গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার পর থেকে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রাহক সংখ্যা সামগ্রিক ভাবে হ্রাস পেয়েছে- জুন মাসে এ খাতে মোট ১৮ দশমিক ৪৫ কোটি গ্রাহক সংখ্যা রেকর্ড করা হয়, অক্টোবর মাসে তা কমে এসে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৬৭ কোটিতে। টেলিযোগাযোগ খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি এই নিষেধাজ্ঞা প্রতিষ্ঠানটির স্টক মার্কেট বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং সম্ভাব্য এফডিআই আকর্ষণ করার জন্য দেশের ভাবমূর্তিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে বলে মনে করে গ্রামীণ ফোন।
এছাড়া, এনবিআর কর্পোরেট ট্যাক্স এবং পরোক্ষ কর থেকেও রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যার মধ্যে রয়েছে প্রতি নতুন গ্রাহকদের সিম ট্যাক্স বাবদ ২০০ টাকা। অন্যদিকে বিটিআরসি নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে জিপি’র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব হারাচ্ছে।
এর আগে এনবিআর গ্রামীণফোনকে ২০১৫-২০১৬, ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ সালে টেলিযোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা দিয়ে সম্মানিত করে।
-এমএ