For English Version
বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
হোম

শ্রীমঙ্গলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ

Published : Saturday, 31 July, 2021 at 9:25 AM Count : 798

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হোসেনাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন পিটুর বিরুদ্ধে শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। গত ৬ জুলাই এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ পত্র সূত্রে জানা যায়, ওই স্কুলের এমসিডা কর্তৃক দেওয়া প্যারা শিক্ষিকার সাথে প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন পিটু প্রায় সময়ই বাজে বাজে কথা বলতেন। এবং নোংরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। তখন শিক্ষিকা কৌশলগত ভাবে তা এড়িয়ে যান। কিন্তু গত ৬ জুলাই লগডাউন চলাকালীন সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কাজের উছিলা দেখিয়ে তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষিকাকে বিদ্যালয় খোলা রাখার নির্দেশ দেন।
সে সময়ে প্রধান শিক্ষক সাথে করে মদ নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করেন। তখন বিদ্যালয়ের ভিতর মদ পান না করার জন্য নিষেধ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। তারপরও প্রধান শিক্ষক মদ পান করতে থাকেন এবং ভুক্তভোগী শিক্ষিকাকে বাজে কথা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন পিটু তাঁর সহকারী শিক্ষিকা রিচি মেডামের সাথে শারীরিক সম্পর্কের সুযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তখন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা প্রতিবাদ করায় এক পর্যায়ে সে তার উপর ভীষণ ভাবে ক্ষেপে যায়। মার মুখি হয়ে দুই থেকে তিন বার তেড়ে আসে এবং ভুক্তভোগী শিক্ষিকাকে নোংড়া প্রস্তাব দেন।

অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রাশাসন থেকে গত ১৭ জুলাই সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল হাসনাৎ মো. জহিরুল ইসলাম ভূঞা সরেজমিনে গিয়ে উক্ত অভিযোগের তদন্ত করেন। তিনি অবজারভার সংবাদদাতাকে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি। তদন্ত করে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন রিপোর্ট প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।

সরেজমিনে ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়ে কথা হয় ভুক্তভোগী নারী ওই বিদ্যালয়ের প্যারা শিক্ষিকার সাথে। তখন তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রধান শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন পিটু আমার সাথে ওই রুমে জোর জবরদস্তি করে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু করতে পারেন নি। জবরদস্তির এক পর্যায়ে কষ্ট করে বের হয়ে আসি। উনি অনেক ধরণের খারাপ ব্যবহারও করছেন আমার সাথে। কিন্তু আমি সামাজিকতার কারণে এই কথা পরিবার বা আত্মীয়স্বজনদের ভয়ে বলতে পারিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষিকা বলেন, আমি তো অবিবাহিত মেয়ে। যার কারণে আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কাউকে বলে নিজের মান সম্মান এবং লাইফটাকে নষ্ট করতে চাই না। যার কারণে আমি আগে বলতে পারিনি। ওই দিন বেলা ৩ টার পরে আমার সাথে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে ঘটনার অনুসন্ধানে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা ও ঘটনা স্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী মালেক মিয়ার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ডেইলি অবজারভারের হাতে এসেছে। সেই রেকর্ডে শুনা যাচ্ছে, ঘটনার সময় মালেক রুমের ভিতর উপস্থিত ছিলেন। এবং তার সামনেই প্রধান শিক্ষক মোশারফ শিক্ষিকাকে জোর জবরদস্তি করছেন। বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে দেখে মালেক শিক্ষিকাকে শিক্ষক মোশারফ এর হাত থেকে সরিয়ে, বের হয়ে যেতে বলেন।

অডিও ক্লিপে আরো শুনা যাচ্ছে, ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মালেক'কে বলছেন, আপনি তো ঘটনা স্থলে ছিলেন, আমার সাথে যা ঘটেছে তা দেখেছেন। যদি বিচার বসে তখন আপনি বিচারে বলতে হবে আমার সাথে কি কি ঘটেছিল। তখন মালেক বলেন, প্রধান শিক্ষক ও ভুক্তভোগী শিক্ষিকার সামনে বলতে পারবেন যে শিক্ষকের এই আচরণ করা ঠিক হয়নি, ভুল করছেন। কিন্তু সবার সামনে বলতে পারবেন না।

এ পুরো ঘটনার বিষয়ে গত ৮ জুলাই হোসেনাবাদ চা বাগানের ব্যাবস্থাপক এম কে পারিয়াল সাক্ষরিত শিক্ষকের অপকর্মের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একটি আবেদন দেন। সেই আবেদন পত্রে উল্লেখ করেন, হোসেনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। মোশাররফ হোসেন পিটু মাস্টারের অসামাজিক কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। বাগানের অনেক দূর্নীতির সাথে সে জড়িত।

পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, অর্থ কেলেংকারী, চোরাই পথে গাছের ব্যবসা, নারী কেলেংকারী, সার্বক্ষণিক মদ্যপ অবস্থায় থাকা, স্কুলে মদের আড্ডা বসানো, বর্তমানে লকডাউনে সকল স্কুল বন্ধ থাকলেও হোসেনাবাদ স্কুল খোলা রাখা সহ বিভিন্ন অপকর্মের কথা উল্লেখ করা হয়।

এ সকল ঘটনার অভিযোগের বিষয়ে হোসেনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন পিটুর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অবজারভার সংবাদদাতাকে বলেন, আমার নামে সবকিছু মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ। আমি দীর্ঘদিন এই বিদ্যালয়ে আছি। এমন কোন অসামাজিক কাজ আমি করিনি। আমি কোনদিন স্কুল বা এর বাহিরে মদ পান করিনি। বাগানের ব্যাবস্থাপক ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই শিক্ষিকাকে ব্যবহার করে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। আমার নামে যা যা অভিযোগ এনেছেন সব মিথ্যা বানোয়াট।

এ ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদার অবজারভার সংবাদদাতাকে বলেন, আমরা সেখানে গিয়েছি। অনেকের সাথে আলাপ করা হয়েছে। আমি চাই এই ঘটনার একটা সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। তদন্তে যা আসে তার উপর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এমসিডা'র নির্বাহী পরিচালক তহিরুল ইসলাম মিলন অবজারভার সংবাদদাতাকে বলেন, এমসিডা কতৃক দেওয়া প্যারা শিক্ষিকার সাথে যে নোংরা আচরণ করেছেন প্রধান শিক্ষক তা সঠিক ভাবে তদন্ত করা হোক। তদন্ত করে তাকে সঠিক বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হলে, এই ধরণের আচরণ আর কোন শিক্ষক করবে না।

ঘটনার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুস ছালেক অবজারভার সংবাদদাতাকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা তদন্ত করেছি। যেহেতু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর ভুক্তভোগী শিক্ষিকা অভিযোগ দিয়েছেন। সেখান থেকে তদন্ত করা হয়েছে। আমরা এখন অপেক্ষায় আছি। তদন্ত রিপোর্ট দেখে যা বলবেন, তার উপর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরএ/এসআর


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft