For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

দুই মাসেই হারিয়ে যায় ভালোবাসা; অবশেষে খুন

Published : Sunday, 20 June, 2021 at 6:10 PM Count : 810

নারী-পুরুষ দু’জন ভিন্ন ধর্মের। দু’জনই বিবাহিত। তবু ‘অসম সম্পর্কে’ জড়িয়ে দু’জন পালিয়ে বিয়ে করেন। দুই মাসের মধ্যেই হারিয়ে যায় ভালোবাসা। 

প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন স্বামী। জানতে পেরে নিজেকে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টায় থাকেন স্ত্রী। এ নিয়ে মনোমালিন্যের মধ্যেই স্বামীর মাথায় খুনের নেশা চাপে। প্রথমে পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ এবং পরে বেলের শরবতের সঙ্গে কীটনাশক খাইয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন স্ত্রীর।

এরপর লাশ বাসায় তালাবদ্ধ করে রেখে পালিয়ে যান স্বামী। পুলিশ যেন হদিস না পায়, সেজন্য স্ত্রীর মোবাইল নিয়ে ফেলে দেন নালায়। প্রায় এক মাস পর চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানা পুলিশ তালা ভেঙে গলিত লাশটি উদ্ধার করে। 

প্রায় সূত্রবিহীন মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে মামলার তদন্তভার নিয়ে গ্রেফতার করে ওই স্বামীকে। তার জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ। আসামিকে গ্রেফতারের এক মাসের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করেছে সিআইডি।
আসামি পল্লব বর্মণ (৩৪) গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর গ্রামে। আর হত্যাকাণ্ডের শিকার মিমি আক্তার (২৬) এক সিঙ্গাপুর প্রবাসীর স্ত্রী।

গত ১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টায় নগরীর পাহাড়তলী থানার আব্দুল আলী সড়কে জনৈক নাজির আহমেদের মালিকানাধীন ‘মাধবী ভবনে’র চতুর্থ তলার একটি বাসার তালা ভেঙে অজ্ঞাত নারীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিনই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। আনুষ্ঠানিক তদন্তভার পাওয়ার পর আসামি শনাক্ত করে গত ৯ মে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১০ মে আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি। ১৪ জুন মামলার অভিযোগপত্র মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহিউদ্দিন রতন।

সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘লাশটি যখন উদ্ধার করা হয়, সেটি ছিল গলিত ও একেবারে বিকৃত। চেনার উপায় ছিল না। কোনো ধরনের ক্লুও ছিল না। বাড়ির মালিক বলছিলেন, মাস দেড়েক আগে দু’জন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নেন। এরপর আর তিনি কিছু জানেন না। তাদের কোনো ছবি, এনআইডি কিছুই ছিল না।’

শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘কিন্তু ওই বাসায় আমরা একটি মোবাইলের প্যাকেট পাই। ওই প্যাকেটের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা ওই বাসায় অবস্থানকারী একজনের অবস্থান ময়মনসিংহে শনাক্ত করতে পারি। এরপর আমরা পল্লবকে গ্রেফতার করি। গ্রেফতারের পরই মূলত পল্লব ও মিমির পরিচয় উদঘাটন হয়েছে এবং পুরো ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি।’

তবে এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য ও বিষ খাইয়ে হত্যার বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ খালেদ।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নিজ গ্রাম কালামপুরে পল্লবের ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা ছিল। মিমির স্বামী সিঙ্গাপুর প্রবাসী। তার ছয় বছর বয়সী এক ছেলে আছে। পল্লবেরও স্ত্রী-সন্তান আছে। পল্লবের দোকানে মিমি মোবাইলে টাকা লোড করার জন্য যেতেন। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। দুই বছর প্রেম করার পর গত ১৮ জানুয়ারি মিমিকে চট্টগ্রামে এনে বিয়ে করেন পল্লব।

প্রথমে তারা নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। কয়েকদিন সেখানে অবস্থানের পর যান কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে বেড়াতে। সেখানে ২০ দিন অবস্থানের পর দু’জনের আবার চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। ১ মার্চ দু’জন নগরীর পাহাড়তলী থানার আব্দুল আলী সড়কের বাসাটিতে ওঠেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মহিউদ্দিন রতন বলেন, ‘জবানবন্দি ও তদন্তে আমরা পেয়েছি— নতুন বাসায় ওঠার পর পল্লব তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। মিমি সেটা শুনে ফেলেন। এতে বাসায় ওঠার পরদিন থেকেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। মিমি ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেন। এতে দুর্বল হয়ে পড়লে একজন পল্লী চিকিৎসককে বাসায় এনে তার চিকিৎসা করানো হয়। এতে কিছুটা সুস্থ হয়ে মিমি আবার ঝগড়া শুরু করলে পল্লব খুনের সিদ্ধান্ত নেন।’

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, গত ৪ মার্চ দুপুরে পল্লব বাসার ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়ার জন্য ওঠেন। সেখানে ছাদবাগানের জন্য মালিকের রাখা বোতলভর্তি কীটনাশক তিনি বাসায় নিয়ে আসেন। বিকেলে বাসা থেকে বেরিয়ে ১০টি ঘুমের ওষুধ কেনেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পল্লব পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মিমিকে পানির সঙ্গে ১০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেন। এতে মিমি আরও দুর্বল হয়ে পড়লে তাকে বেলের শরবত খাওয়ানোর নামে এর সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খাইয়ে দেন। মুখ দিয়ে লালা বের হয়ে যাবার পর পল্লব বুঝতে পারেন, মিমি মারা গেছেন। তখন তিনি মিমির পোশাক ও মোবাইল নিয়ে বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে যান।

রাতে সেন্টমার্টিন ট্রাভেলসে করে ঢাকার পথে রওনা দেন পল্লব। বাস থেকে নামেন আবদুল্লাহপুর। সেখানে মিমির মোবাইলটি একটি নালায় ফেলে দেন। এরপর কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করে ময়মনসিংহের ভালুকায় চলে যান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

সিআইডির এসএসপি শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘ঘটনার প্রায় ২৬ দিন পর লাশ উদ্ধার হয়েছে। আমরা একমাসের মধ্যেই তদন্ত গুছিয়ে ফেলি। এরপর আসামি গ্রেফতার করি। আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়ে সব স্বীকার করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সূত্রবিহীন মামলাটির রহস্য উদঘাটন হয়েছে।’

এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft