‘মাইক্রোবাসটি আসছিল। মুহুর্তের মধ্যেই বিকট শব্দে মাইক্রোবাসটি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। রাস্তার ওপর মহিলা ও শিশুরা পড়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি এবং একটা পিকাপ থামিয়ে তাদের হাসপাতালে পাঠাই।’
শনিবার সকালে নরসিংদীতে ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী নান্নু মিয়া। এই দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়। আহত হন আরো ৮ জন। আহতদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক। গুরুত্বর আহত ৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শনিবার রাত ১২টার দিকে পাঁচদোনা-ঘোড়াশাল-টঙ্গী সড়কের নরসিংদী সাকুরার মোড়ে দ্রুতগামী ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনামুল হক সাগর জানান, দুর্ঘটনার পরপরই
পাঁচদোনা-ঘোড়াশাল-টঙ্গী সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে
উপস্থিত হয়ে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলোকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যানচলাচল
স্বাভাবিক করে।
নিহতরা হলেন- সাভার জেলার আশুলিয়ার ঝিরাবো এলাকার আব্দুর রশিদের স্ত্রী রুবি আক্তার (৩৩), তার মেয়ে রাইমা খান (৫) ও তার ভাতিজা সাদেক খান (৮), কাদির মিয়ার স্ত্রী সামসুননাহার (৬০), মুক্তি আক্তার (৩০)।
আহতরা হলেন-, রাজিয়া (৪০), ইউসুফ মিয়ার ছেলে রশিদ (৪০), জাহের আলীর ছেলে কাজিম উদ্দিন (৪২), সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাইফা (১২), হারুন মিয়ার স্ত্রী শারমীন (৪০) ও মেয়ে ইসরাত জাহান (৮), কাদির মিয়ার স্ত্রী সামসুননাহার (৬০) ও অজ্ঞাত (৪০)।
পুলিশ ও আহতরা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে পরিবারের ১৪ জন সদস্যদের নিয়ে একটি মাইক্রোবাসযোগে আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা সাভারের আশুলিয়ার ঝিরাবো এলাকা থেকে সিলেটে মাজার জিয়ারত করতে গয়িছিল। তারা শাহজালাল ও শাহপরান মাজার জিয়ারত করে জাফলং বেড়াতে যায়। সেখান থেকে আশুলিয়ায় বাড়ি ফিরছিল। মাইক্রোবাসটি পাঁচদোনা-ঘোড়াশাল-টঙ্গী সড়কের নরসিংদী সাকুরা মোড়ে পৌছলে দ্রুতগামী একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে রুবি আক্তার ও তার মেয়ে রাইমা মারা যায়। এ সময় মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে গুরুতর আহতবস্থায় ৪ জনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে কাদির মিয়ার স্ত্রী সামসুননাহার (৬০) মারা যায়।
আহত যাত্রী আব্দুর রশিদ বলেন, সিলেটে মাজার জিয়ারত শেষে জাফলং বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আশুলিয়া ফেরার ফথে একটি ট্রাক আমাদের মাইক্রোবাসের ওপর উঠিয়ে দেয়। এর পর দেখি আমার স্ত্রী ও মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা রাস্তার ওপর পড়ে আছে।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসাদ বলেন, গুরতর ৪ জন মহিলাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনের হাত থেতলে গেছে। আর ৪ জনেরই মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে।
মিডিয়া সমন্বয়ক নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এলামুল হক সাগর বলেন, দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৩ জন মারা গেছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা হয়েছে।
বিএ/এনএন