মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিলের সংগ্রহশালা কুড়িগ্রামের ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’। দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থাকলেও এবার তা রূপ নিচ্ছে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে।
২০১২ সালে কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম আব্রাহাম লিংকনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হলেও এর নিজস্ব কোনও ভবন ছিল না। শহরের নাজিরা ব্যাপারিপাড়ায় যাত্রা শুরু করা দ্বিতল বাসভবনের জাদুঘরটির বসার ঘর, খাবারের ঘর, এমনকি শোবার ঘরেও সাজিয়ে রাখা হয়েছে স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দুই হাজারেরও বেশি প্রামাণ্য দলিল ও উপকরণ।
জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতা আব্রাহাম লিংকনের বর্তমান বাসভবনের পাশে তারই দেওয়া ২০ শতাংশ জমিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বুধবার (০৯ জুন) বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। কাজ শেষ হলেই উত্তরবঙ্গ জাদুঘর পাবে স্থায়ী ঠিকানা।
২০১২ সালের ১২ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে উত্তরবঙ্গ জাদুঘর। ধীরে ধীরে বড় সংগ্রহশালায় পরিণত হয় বাসভবনটি।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষণায় মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক দুর্লভ স্মারক সংগ্রহ করেন লিংকন। এগুলো নিয়ে একক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন সংগ্রহশালা।
তার বসার ঘর থেকে শুরু করে শোবার ঘরে সাজিয়ে রাখেন স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং দুই হাজারের বেশি প্রামাণ্য দলিল ও নানা উপকরণ।
জাদুঘরটিতে রয়েছে বৃহত্তর রংপুর জেলার পাঁচ হাজার ৮৬৫ জন রাজাকারের তালিকা, তাদের ক্ষমা প্রার্থনার দলিল, শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা, রৌমারী রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত কিছু ডামি রাইফেল, ব্রিটিশ আমলের তলোয়ার, ভুরুঙ্গামারী রণাঙ্গনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেল, গ্রেনেড-গোলার বাক্স ও নানা দলিল।
দিনের বেলা জাদুঘরটিতে থাকে দর্শণার্থীদের আনাগোনা। রাতে সাধারণ বাসভবনের মতোই ব্যবহার করতেন এর প্রতিষ্ঠাতা। নির্মাণকাজ শেষ হলে জাদুঘরটিতে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারবেন দর্শকরা।
নতুন ভবনের মূল নকশায় নিচতলায় থাকছে পাঠাগার, স্টোর, অফিস, সেমিনার রুম, ক্যাফেটেরিয়া এবং থিয়েটার হল। উপরের ফ্লোরে থাকবে মূল গ্যালারি।
আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রণালয়কেও ধন্যবাদ। ইতিহাস সংরক্ষণে তারা আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার সঙ্গে বড় হৃদয় নিয়ে শামিল হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণে প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ শুধু বেজমেন্ট এবং গ্রাউন্ড ফ্লোর নির্মাণেই শেষ হবে। মূল নকশা বাস্তবায়ন করতে আরও অর্থের প্রয়োজন। মূল গ্যালারি বানাতেও আরও বরাদ্দ লাগবে। আমি আশা করি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও এ কাজে শামিল হতে পারে। পুরো কাজ শেষ করতে পারলে একটি আন্তর্জাতিকমানের জাদুঘরে পরিণত হবে উত্তরবঙ্গ জাদুঘর।’
-এমএ