উপসর্গ নেই, টেস্টে ধরা পড়ছে করোনা পজিটিভ। রাজশাহী মহানগরীতে ভ্রাম্যমাণ র্যাপিড করোনা টেস্টে এমন ফলাফল এসেছে। তবে করোনা পজিটিভরা বলছেন, তাদের নেই জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়াও অন্যকোন সমস্যা। ঠিক আছে খাবারের রুচি, পাচ্ছেন ঘ্রাণও।
এমন অবস্থায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। এ পরিস্থতিতে ঘরবন্দির বিকল্প নেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। গত বুধবার মহানগরের ১৩টি ভ্রাম্যমাণ বুথে ফ্রি র্যাপিড করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এ টেস্টে ৯৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৬ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। যা শতকরা হিসেবে ১৩ শতাংশ।
মাহমুদ নামের এক যুবক জানান, ‘আমার কোন উপসর্গ ছিলো না। নরমাল ছিলো সবকিছু। সর্দি সর্দি লাগছিলো, অ্যালাকট্রোল খেয়েছিলাম। ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। তবে করোনা পজিটিভ হওয়ার পরে দুদিন থেকে শরীরে শক্তি পাচ্ছি না।’
রাজশাহী সিটি করর্পোরেশনের (রাসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুম আরা বেগম জানান, ‘উপসর্গ কিছু না কিছু থাকবেই। যাদের পজিটিভ এসেছে তারা হয়তো উপসর্গ বুঝতে পারেনি।’
ওইদিন মহানগরের আমচত্বরে ৫৮ জনের পরীক্ষা করে ৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। একইভাবে কাশিয়াডাঙ্গায় ১০০ জনে মধ্যে ১১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১০০ জনে ১৭ জন, সিঅ্যান্ডবি মোড়ে ১২৬ জনে ২৩ জন, সাহেব বাজারে ১০২ জনে ৩১ জন, ভদ্রামোড়ে ১০৪ জনে ১২ জন, তালাইমারীতে ১০০ জনে ৩ জন, বিন্দুর মোড়ে ১০০ জনে ১০ জন, কাদিরগঞ্জে ৬০ জন ৪ জন, পঞ্চবটিতে ১৬ জনে ২ জন, মেহেরচন্ডীতে ৩৭ জনে ৪ জন ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ১৭ জনে ২ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
এর আগে গত সোমবার মহানগরের পাঁচটি পয়েন্টে করোনার র্যাপিড টেস্টে শুরু হয়। সেইদিন আক্রান্তের হার ছিলো ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এর পরের দিনে মঙ্গলবার (৮ জুন) ছিলো ১০ দশমিক ২২ শতাংশ, বুধবার (৯ জুন) আক্রান্তের হার ছিলো ১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
করোনার র্যাপিড টেস্টের ফলাফলে দেখা গেছে, প্রথম দিনের তুলনায় পরীক্ষা ও আক্রান্তের হার বেড়েছে। তবে অনেকেই উপসর্গ ছাড়াই করোনা পরীক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে অনেকের করোনা পজিটিভ এসেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলছেন, র্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। তবে যারা নেগেটিভ হচ্ছেন, পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।
অন্যদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এমন অবস্থায় নতুন হটস্পটে রূপ নিয়েছে রাজশাহী। করোনার লাগাম টেনে ধরতে রাজশাহীতে চলছে বিশেষ বিধিনিষেধ। তার পরেও কমানো যাচ্ছে না সংক্রমণ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিনই নতুন রোগীর চাপ বাড়ছে। সীমিত জনবল নিয়ে একই হাসপাতালে করোনাসহ সবধরনের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন হাজারও রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে হাসপাতালে। শুধু করোনা নয়, হাসপাতালটিতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। একই সাথে অন্য রোগী ও করোনায় আক্রান্ত রোগীর চলাফেলা চিন্তার বিষয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করোনা ও করোনা উপসর্গের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত চার জুন করোনার দুই বছরের মধ্যে হাসপাতালটিতে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি জুন মাসের দশ দিনে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ১৭ দিনে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৪২ জন।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর এখন করোনার হট স্পটে পরিণত হয়েছে রাজশাহী। ছড়িয়েছে সামাজিক সংক্রমণও। এই সংক্রমণের হার জানতে চলছে ভ্রাম্যমাণ করোনা পরীক্ষা।
-আরএইচ/এনএন