মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গ্রীষ্মের প্রখর তাপে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চলমান তাপদাহে পুড়ছে প্রকৃতি। সূর্যের প্রচন্ড তাপ আর বাতাস যেন আগুনের ছোঁয়া।
সকাল থেকেই সূর্য তেঁতে থাকে এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। এমন একটি অবস্থায় প্রাণীকূল ও জনজীবনে উঠেছে চরম হাঁস ফাঁস।
মানুষ আকাশের দিকে দুই চোখে চেয়ে থাকে একটু বৃষ্টির আশায়। এমন আবহাওয়ার মাঝে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ভাইরাস জ্বর, পেটের পীড়া ও জলবসন্তের।
এবার গ্রীষ্মের শুরু থেকেই কমলগঞ্জে তেমন বৃষ্টির দেখা মেলেনি। প্রখর রোদ তাপে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গৃহপালিত পশু-পাখিরা গরম থেকে একটু শীতল স্বস্তি পেতে পুকুর বা ডোবায় নেমে বসে আছে। অনাবৃষ্টি ও সঠিক সময়ে সেচ দিতে না পারায় প্রচন্ড তাপদাহে রবি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেল ৩টায় কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমকি ০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কষ্টের শেষ নেই খেটে খাওয়া দিনমজুর ও চা শ্রমিকদের। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে লেকের পানিতে লাফালাফি করতে দেখা যায় চা-শ্রমিকদের ছেলেদের।
ভানুগাছ বাজারের কয়েকজন রিকশাচালক ও অটোচালক জানান, সংসারের খাবার সংগ্রহের জন্য রোদ কি আর ঝড় বাদল কি! কাজ না করলে অনাহারে থাকতে হবে।
রমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পাকা বাড়ি ঘরের গৃহিনীরা।
এদিকে, গরমে ও রোজায় এ সময়ের তরমুজর ও আনারসের বাজারে চাহিদা থাকায় বাজারে এখন অগ্নি মূল্য।
বাজারে আসা ক্রেতা ডলি আক্তার অবজারভারকে বলেন, '৪/৫ দনি আগে যে তরমুজ ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় কেনা হয়েছে এখন সে তরমুজের মূল্য হয়েছে ৩৫০ টাকা। একই অবস্থায় আনারসের বেলায়ও। পাইকারি ভাবে আনারস বাগান থেকে খুচরা বিক্রেতারা একটি আনারস ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা দরে কিনে আনলেও বিক্রি করছেন ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে।'
আনারস চাষী শুকুর মিয়া অবজারভারকে বলেন, 'খুচরা বিক্রেতাদের মাঝে সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের কাছে পাইকারি ভাবে একটি আনারস ২০ টাকার ওপরে বিক্রি করা যায় না। আর তারা বাজারে একটি আনারস বিক্রি করছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে।'
তিনি আরও বলেন, 'যদি বাজারগুলো ভালো ভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়। তাহলে কেউ সিন্ডিকেট করতে পারবে না।'
উপজেলা উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডা. পরিতুষ শর্মা অবজারভারকে বলেন, 'এ আবহাওয়ায় এখন ভাইরাস জ্বর, পেটের পীড়া ও জল বসন্তের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন করে এসব রোগী দেখছি।'
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া অবজারভারকে বলেন, 'গত কয়েক দিনের তাপপ্রবাহের কারণে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে। হাসপাতালে পেটের পীড়াজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। তবে রোগীদের মধ্যে বয়স্করা বেশি। রয়েছে ভাইরাস জ্বর ও জল বসন্তের রোগীও।'
তিনি আরও বলেন, 'বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে করোনা প্রতিরোধে সকল স্বাস্ব্যবিধি মেনে চলতে হবে।'
-এসএস/এমএ