মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বাঘমারা বনক্যাম্প এলাকায় শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় আগুন লেগেছিল। অগ্নি নির্বাপক দল টানা সাড়ে ৪ ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুন লাগার পর আত্মরক্ষায় বন্যপ্রাণীগুলো বন থেকে বের হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গাছগাছালির সঙ্গে অনেক ঘরসহ পাখি পুড়ে গেছে।
ঘটনার পর শনিবার বিকেল থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শুরু করলেও প্রতিবেদন জমা দেবে সোমবার বিকেলে।
রোববার দুপুর ২টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত লাউয়াছড়া বন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগুনে বেশ কিছু মূল্যবান গুলম্মসহ ছোট আকারের গাছ গাছালি পুড়ে গেছে। এখনও এ এলাকায় ছাই ও পোড়া ঝোঁপ-ঝাঁড় রয়েছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বনে আগুন লাগার পর এ বনের বেশ কিছু বন্য শুকর ও বানরকে আত্মরক্ষায় বন থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে সড়ক পার হতে দেখা গিয়েছিল। এ সময় এ এলাকায় অসংখ্য পাখির কিচিরমিছির শব্দও শোনা গিয়েছিল।
রোববার ঘটনাস্থল এলাকায় রাখাল প্রতাপ সাংবাদিকদের জানায়, পুড়ে যাওয়া বনে অনেক পাখির বাসা ছিল। আগুনে এসব বাসায় পাখি পুড়ে মারা যেতে পারে।
রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আশা কমলগঞ্জ উপজেলা জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সভাপতি মঞ্জুরুল আহমেদ আজাদ (মান্না) বলেন, প্রায় তিন একর এলাকা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ এলাকার মূল্যবান নানা জাতের বাঁশ ও ছোট আকারের অনেক গাছ পুড়ে গেছে। এ সময় গাছের থাকা অসংখ্য পাখির বাসাও পুড়ে গেছে। এতে কিছু পাখির ছানাগুলো পুড়ে মরতেও পারে।
ঘটনাস্থলে আসা কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ বলেন, পোড়া বন দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে সূত্রপাত নয়। এটি কোন না কোন চক্র পরিকল্পিত ভাবে আগুন লাগিয়েছিল।
শনিবার ঘটনার পর পরই এ বনে ঝোঁপ-ঝাঁড় পরিস্কারে কাজে আসা শ্রমিক তাপস গুঞ্জ সাংবাদিকদের জানিয়েছিল, বন টহলদার সদস্য (সিপিজি সদস্য) মহসিন ঝোঁপ-ঝাঁড়ে আগুন লাগিয়েছিল। এ সময় বনকর্মী মুহিবুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার পর শনিবার বিকেল থেকে বাংলাদেশ বন ও জীববৈচিত্র মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সারওয়ার ও বন বিভাগের মামলা পরিচালক জুলহাস হাসান তদন্ত শুরু করেন।
শনিবার রাতে তারা সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহকারী ডেইলি অবজারভারের কমলগঞ্জ প্রতিনিধি সালাহ্উদ্দিন শুভ ও দেশ রূপান্তর পত্রিকার কমলগঞ্জ প্রতিনিধি রুহুল ইসলাম (হৃদয়) এর বক্তব্য গ্রহণ করেন। এ সময় শ্রীমঙ্গল প্রতিদিনের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
তবে রোববার বেলা ২টার দিকে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলেও তদন্ত কমিটির সদস্যদের পায়নি।
এ সময় লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে ফোন করলে তিনি আগুন সম্পর্কে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
তবে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দেখছে। তারা সোমবার বিকেলে প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে তদন্ত দলের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে ঝোঁপ-ঝাঁড় কাজের শ্রমিকদের অসাবধানতাবশত এ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তাছাড়া এ এলাকায় আগামীতে বনায়ন করা হবে বলে পরিছন্নতার কাজ চলছিল।
তিনি আরও বলেন, বন টহলদারের দায়িত্ব বন বিভাগ নেবে না। তবে এ সময় যদি ঘটনাস্থল এলাকায় কোন বন কর্মী থেকে থাকে তা হলে তার দায়িত্বে অবহেলার দায় নিতে হবে। কারণ, বেশ কিছু সময় নিয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তাৎক্ষণিক জানা গেলে আরও আগে আগুন নেভানো যেত, তাহলে ক্ষয়ক্ষতিও কম হত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) সিলেট বিভাগীয় সম্পাদক আব্দুল করিম বলেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বর্তমান বক্তব্য ও শ্রমিক তাপসের বক্তব্যে বোঝা যায়, এ স্থানে নতুন করে বনায়নের জন্য ঝোঁপ-ঝাঁড় পরিচ্ছন্নতার ফাঁকে কেউ না কেউ আগুন লাগিয়েছিল। এখন শ্রমিকদের অসাবধানতাকে দায়ী করে একটি দায়সাড়া তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
-এমএ