দিনাজপুরের পাকা টমেটো যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে
Published : Sunday, 18 April, 2021 at 9:32 PM Count : 491
করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে চলাচল সীমিত হওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে টমেটোর পাইকারি ক্রেতারা আসতে পারছেন না।
দিনাজপুর জেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে চাহিদার চেয়ে টমেটোর যোগান বেশি। ফলে একদিকে কমেছে দাম, অন্যদিকে পাকা টমেটো ক্ষেতের মধ্যে রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে কৃষকরা বিকল্প উপায়ে ট্রাকযোগে পাকা টমেটো ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক জানান, দিনাজপুরে মূলত সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলায় টমেটোর আবাদ বেশি হয়। চলতি বছর দিনাজপুরে টমেটোর চাষ হয়েছে এক হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। টমেটো মূলত শীতকালীন ফসল হলেও গ্রীষ্মকালে নাভী, রানী ও বিপুল প্লাস জাতের টমেটোর চাষ বাণিজ্যিক ভাবে দিনাজপুরে সফলতা এসেছে।
সদর উপজেলার গাবুড়া বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই বাজারে টমেটোর মৌসুমে ১৫০-২০০টি আড়তঘরে টমেটো খাঁচা করা হতো। এ বছর মাত্র ২৫-৩০ টি আড়তঘরে টমেটো বাছাই করে খাঁচায় ভরা হচ্ছে। প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা দরে। গত বছর প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে। টমেটোর মৌসুমে প্রতি দিন গড়ে ৯০-১১০টি ট্রাকে টমেটো নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকা, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা শহরে। বর্তমানে দিনে ৮-১০টি ট্রাকে টমেটো বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
টমেটো বাজারকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা বাণিজ্যিক স্থানে ছিল। মৌসুম শুরু হতে না হতেই ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর থেকে পাইকাররা আসতেন। সদর উপজেলার গাবুড়া ও পাঁচবাড়ী বাজারে অস্থায়ী ভাবে গড়ে উঠতো হোটেল আর চায়ের দোকান। প্রায় ৩ মাস থাকত এই অবস্থা। এ বছর এসবের কিছুই নেই। চারপাশে কেমন সুনশান নিরবতা।
কুলি শ্রমিকদের দৌঁড়ঝাপ নেই, তাড়াহুড়ো নেই কৃষক কিংবা পাইকারের। টমেটোর মৌসুমে স্কুল–কলেজ পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী এখানে ঘণ্টাব্যাপী শ্রম দিয়ে কিছু টাকা আয় করত।
নারায়ণগঞ্জ থেকে টমেটো কিনতে আসা হাবিবুর রহমান ও গণেশ নারায়ণ বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহ হলো টমেটো কিনতে আসছি। আসার কোন নিয়তই ছিল না। কিন্তু কৃষকদের ফোনের পর ফোনে আসতে হয়েছে। আমরা যে মাল কিনব বেশি করে, সেটাও পারছি না। ঢাকায় মাল নিয়ে যাই। কিন্তু কিনবে কে? বাজারে তো লোকই কমে গেছে।’
গাজীপুর থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে এই বাজারে টমেটো কিনতে আসি। এখানকার অনেক কৃষককে টাকা দিয়ে রেখেছি। তারা সেই টাকায় ফসল ফলান। ফসল উঠলে আমরা নিয়ে যাই। কিন্তু এখন গাড়ি চলে না, লোকজনও নেই। শুধু কৃষকই না, ব্যবসায়ীরাও বেশ ঝামেলায় পড়েছে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সহায়তায় সীমিত পরিসরে টমেটো এই জেলা থেকে ট্রাকে লোড দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।
চিরিরবন্দর থেকে টমেটো নিয়ে এসেছেন বীরেন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, প্রায় ৩ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। গত বছর টমেটো বিক্রি করেছি ৫ লাখ টাকার। গত বছরের চেয়ে এবার ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এক লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
-ডিএইচ/এমএ