For English Version
শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
হোম

পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহত: কী ঘটেছে বাঁশখালীতে?

Published : Sunday, 18 April, 2021 at 11:16 AM Count : 866

" align=

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় ‘এস এস পাওয়ার প্লান্টের’ শ্রমিকরা বিভিন্ন বিষয়ে দাবি দাওয়া জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাতে সাড়া না দেয়ায় শনিবার তারা বিক্ষোভ করেন। 

বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের জেরে গুলিতে মোট পাঁচজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন কমপক্ষে ২৫ জন। তিনি শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে  বলেন, ‘শ্রমিকরা সকালে তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে গিয়ে সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করে।’

কিন্তু শ্রমিকরা দাবি করেছেন, পুলিশ আগেই গুলি করেছে। একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের রমজানে ইফতারের সময় দেয়া হয় না। আমরা বলেছি আমাদেরকে নামাজ, ইফতার ও রোজার ছুটি দিতে হবে। এসব দাবি না মেনে পুলিশকে দিয়ে আমাদের আন্দোলনে গুলি চালানো হয়েছে।’ আরেক জন শ্রমিক অভিযোগ করেন, ‘আন্দোলন শুরুর পরই পুলিশ গোলাগুলি শুরু করে। অনেকের মাথায় পিঠে গুলি লাগে। যে যেভাবে পেরেছি ছুটে পালিয়েছি।’ নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের মধ্যেই পুলিশের একটি ক্যাম্প আছে। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষ তাদের ন্যায্য আন্দোলন দমনে পুলিশকে ব্যবহার করেছেন।

শনিবারের ঘটনায় চারজনকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ মৃত ঘোষণা করা হয়। আরেকজন মারা যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, তিনজন পুলিশসহ ১৯ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে একজন শ্রমিক মারা যান। তিনি বলেন, ‘আহত শ্রমিকরা জানিয়েছেন দাবি দাওয়া নিয়ে মালিক পক্ষের সাথে তাদের আগে থেকেই ঝামেলা চলছিলো।’
ঘটনার পর বাঁশখালী এবং হাসপাতালে আহত শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের বেশ কয়েক মাস ধরে নিয়মিত বেতন দেয়া হচ্ছিল না। সেই সঙ্গে তারা বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। রোজার মাসে কাজের সময় পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন তারা, তাও মানা হচ্ছিল না। এছাড়াও শ্রমিকদের অভিযোগ সেখানে পানি ও টয়লেটের সংকট রয়েছে। আট ঘণ্টার পরিবর্তে ১০ ঘণ্টা কাজে বাধ্য করা হয়। তাদের সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করা হয়। এনিয়ে তারা ১১ দফা লিখিত দাবি দিয়েছিল। শুক্রবারও তাদের কাজ করতে হয়। এনিয়ে শুক্রবার তারা বিক্ষোভ করেন। শনিবার সকালে তারা আবার বিক্ষোভ করলে তা দমনে গুলি চালানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "শ্রমিকদের মধ্যে বেতন  ও কর্মঘণ্টা নিয়ে অসন্তোষ ছিলো। তবে শনিবারের বিক্ষোভে শ্রমিক ছাড়াও স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়। তারা গাড়ি পোড়ায়, ভাঙচুর করে। নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।"

চৌধুরী আরও বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় সংঘর্ষটি সাড়ে সকাল দশটার দিকে শুরু হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। শহর থেকে অতিরিক্ত ফোর্স ঘটনাস্থলে গেছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে”।

সংঘর্ষের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন বেতনভাতা নিয়ে নানা সমস্যা চলছিলো তবে আজকের সংঘর্ষটি কেন হলো সেটি হয়তো তদন্তের পর বলা যাবে।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পুলিশের পাশে এরা কারা?

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পুলিশের পাশে এরা কারা?


বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যে এলাকায় সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলছেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে শ্রমিক সরবরাহ করে বাইরের কোম্পানি। তাদের সাথে শ্রমিকদের টাকা পয়সা নিয়ে অনেকদিন ধরেই সমস্যা চলছিলো। ঘটনাটি কম্পাউণ্ডের ভেতরে। আমাদের সেখানে প্রবেশও করতে দেয়া হয়না”।

তবে এলাকাবাসী বলছে কয়েকদিন ধরেই বেতন ভাতাসহ বেশ কিছু দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ চলছিলো।

শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পরিষদের জন্যও দাবি জানিয়ে আসছিলো।

এসব নিয়ে আজ তারা সেখানে অবরোধের ডাক দিয়েছিলো বলে জানান বিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন এলাকার একজন অধিবাসী।  তার বক্তব্য ছিল, “সকালে শ্রমিকরা জমায়েত হচ্ছিলো।  তখনি প্রকল্পের বিদেশী শ্রমিক ও পুলিশের সাথে স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপরই গুলির শব্দ শোনা যায়”।

বাঁশখালী থানার ডিউটি অফিসার এসআই আল মামুন জানান, "প্ল্যান্টের মধ্যেই পুলিশ ক্যাম্প আছে। সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে গুলির ঘটনা ঘটে। তারপর আরো পুলিশ পাঠানো হয় চট্টগ্রাম থেকে। অতিরিক্ত পুলিশ যাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।" এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, "পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। তবে বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।"

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে এলাকার জনমত শুরু থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়ায় আগেও কয়েকবার সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

২০১৬ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রটি নির্মাণের পক্ষ বিপক্ষ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছিলো। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতেও কেন্দ্রটি নিয়ে মতবিনিময়সভা চলাকালে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ এস আলম-এর কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় প্রায় আট বছর আগে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে স্থানীয়রা শুরু থেকেই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে এর বিরোধিতা করে আসছেন।

এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সাল নাগাদ কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা। এই প্রকল্পে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানে ৩০ ভাগ বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা গেছে। বাঁশখালীর প্রত্যন্ত এলাকায় সমূদ্রের তীরে এর অবস্থান। ফলে সাংবাদিকরা বা প্রশাসন ওখানকার খোঁজ খবর তেমন পান না। পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও কেন্দ্রটিতে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। প্রায় তিন হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করেন। ব্যবস্থাপনায় চীনা নাগরিকরাও আছেন।

এ নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম লাভলুকে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

-এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft