প্রায় ২২ বছর আগে যে দিন নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা হয়েছিল,
আফগানিস্তান থেকে সেনা ফিরিয়ে আনতে সেই দিনটিই বেছে নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছর ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে
বাইডেন প্রশাসন।
দেশটির একাধিক উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টকে এই তথ্য জানিয়েছেন। এই সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমেই শেষ হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দু’দশক যুদ্ধ, যা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুব শিগগির এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইট টাওয়ার ও পেন্টাগনে বিমান হামলা চালিয়েছিল কট্টর ইসলামপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা নেটওয়ার্ক। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় তিন হাজার মার্কিন নাগরিক।
সৌদি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হলেও সে সময় আল কায়দার মূল ঘাঁটি ছিল আফগানিস্তান। টুইন টাওয়ারে হামলার পরই আফগানিস্তানে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৩ সালে আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী।
অভিযানে তালেবান সরকারের পতন হলেও দেশটি থেকে তালেবানগোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক পরিসেংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধটির পেছনে দেশটি এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
বাইডেন প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘ গত দুই দশকে বৈশ্বিক রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কৌশলগত স্বার্থের বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে যেমন নতুন কিছু সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সৃষ্টি হয়েছে নতুন প্রতিপক্ষও।’
‘রাশিয়া ও চীন প্রতিনিয়ত আগ্রাসী হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া এবং ইরান। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশ, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের পরিস্থিতিও অশান্ত।’
‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান হুমকি এরাই। আফগানিস্তান আর এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু নয়।’
ইতোমধ্যে অবশ্য আফগানিস্তান থেকে অধিকাংশ মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে সেখানে আড়াই হাজারের মতো মার্কিন সেনা রয়েছেন, যাদের মূল দায়িত্ব দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারের নিরাপত্তাবিধান করা।
জো বাইডেনের পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতবছর আফগান সরকারের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন, সে অনুযায়ী চলতি বছর ১ মের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর চুক্তি বাস্তবায়নের পথে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অনেক রাজনীতিবিদের পাশাপাশি আফগান সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়, সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে তালেবান ও অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো। ফলে আবারও গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে আফগানিস্তানে।
অন্যদিকে তালেবান নেতারা হুমকি দিয়েছেন, অবিলম্বে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার না করা হলে তারা কোনো প্রকার শান্তি আলোচনায় অংশ নেবেন না। পাশাপাশি মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা না করার বিষয়ে যে চুক্তি তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে করেছিলেন, সেখান থেকেও সরে আসবে তালেবান।
বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘ব্যাপারটি এমন নয় যে আমরা আফগানিস্তান থেকে আমাদের মনযোগ সরিয়ে নিয়েছি বা নিচ্ছি। সেখানে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সে সম্পর্কিত তথ্য সবসময়ই রাখা হবে। আমরা শুধু চাইছি, দুই দেশের সম্পর্কের মাঝখানে যে আমাদের সৈন্যরা আর না পড়েন। তাদেরকে যেন বলির পাঁঠা না বানানো হয়।’ সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
এসআর