এলিজা কার্সন। বছর আঠারোর এই মেয়েটি নাসার কনিষ্ঠতম সদস্য। সবকিছু অনুকূলে থাকলে যিনি কি না হবেন ২০৩৩ সালে মঙ্গলে যাওয়া পৃথিবীর প্রথম মানুষ।
এদিকে, যেহেতু মঙ্গলে গেলে তাঁর আর পৃথিবীতে ফিরে আসার সম্ভব নয়, তাই নাসার কাছে যৌনতা, বিয়ে বা সন্তানধারণের নিষেধাজ্ঞাপত্রতে সাক্ষর করেছেন এলিজা।
এছাড়া, নাসা অফিসিয়ালি ১৮ বছরের আগে কাউকে নভোচারী হিসেবে আবেদন করার সুযোগ দেয় না।
তবে এলিজার ক্ষেত্রে এ নিয়ম একটু ব্যতিক্রম করা হয়েছে। কিন্তু জানেন তিনি কে? কিভাবে বড় হয়েছেন। আসলে এলিজা জানে না তার মা কে। ছোট বেলা থেকেই সিংগেল প্যারেন্ট হিসেবে বাবার কাছে বড় হয়েছে সে। ৭ বছর বয়সে বাবা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন আলবামার একটি স্পেস ক্যাম্পে। ব্যস! সেই ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা তাঁকে এমন ভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে যে এখন তাঁর ভাবনার জগতটাই অন্য শিশুদের চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে।
জানা যায়, এলিজার যখন ৯ বছর বয়স তখন তার সঙ্গে দেখা হয় নাসার এক মহাকাশচারী সান্ড্রা ম্যাগনাসের। তখন এই নারী মহাকাশচারী তাঁকে জানিয়েছিলেন, “ছোট বেলাতেই তিনি মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।” তখন থেকেই ছোট্ট এলিজার মনে এই কথাটি পুরোপুরিই গেঁথে যায়। তাঁর চোখে তখন শুধু একটাই স্বপ্ন গাঢ় হয় তা হল, একবার মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ, সামনে থেকে মহাকাশকে দেখার সুযোগ। ১২ বছর বয়সে এলিজা সবচেয়ে কম বয়েসী হিসেবে আলবামা, কানাডার কুইবেক ও তুরস্কের ইজমিরে নাসার তিনটি ভিন্ন স্পেস ক্যাম্পে অংশ নেয়।
তখনই মহাকাশের বেসিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশন কিভাবে পরিচালিত হয়, তা আয়ত্ত করে নিয়েছেন এলিজা। এছাড়া ভারহীন স্থানে থাকার উপায়, মহাকর্ষ-শূণ্য স্থানে চলাচল করার পদ্ধতি সবটাই শিখে নিয়েছে সে। জেনে নিয়েছেন, যেকোনো বিশেষ মুহুর্তে কিভাবে জরুরী সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
পাশাপাশি রোবোটিকস বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেছে সে। নিজে একটি রকেটও বানিয়ে ফেলেছে এলিজা। নাসার থেকে তাঁকে একটি ‘কল নেম’ও দেওয়া হয়েছে- যার নাম ব্লুবেরি। এছাড়াও “মার্স ওয়ান” নামের এক বেসরকারি সংস্থা তাঁকে তাদের সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করেছে।
এলিজা জানে, সে হয়তো আর ফিরে আসবেনা এই পৃথিবীতে। আর মাত্র ১৪ বছর পরে একমাত্র নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে কোটি কোটি মাইল দূরের লোহার লালচে মরিচায় ঢাকা প্রচন্ড শীতল নিষ্প্রাণ গ্রহের ক্ষীয়মাণ নীল নক্ষত্রের নিচে হারিয়ে যাবেন তিনি। তবে তাতে ভীত নয় সে।
এলিজা বলেন, ‘Always Follow Your Dream and Don’t let Anyone Take it From You’। কোনও ছোটোখাটো স্বপ্ন সে দেখেনি।
তাই তাঁর সাহসিকতাকে বাহবা দিয়েছেন এক মহাকাশচারী গবেষক। প্রথম থেকেই নাসা এলিজাকে মানুষের ভবিষ্যৎ বাসস্থান মঙ্গলে অভিযানের জন্য শক্ত সমর্থ করে তৈরি করতে চেয়েছে। ২০৩৩ সালে যখন মঙ্গল গ্রহে প্রথমবার মানুষ পাঠানোর অভিযান শুরু হবে, তখন এলিজার বয়স হবে ৩২, যা একজন নভোচারীর জন্য যথাযথ বয়স। এলিজাই প্রথম ব্যক্তি হবেন যিনি এতো কম বয়সে নাসার ১৪টি দর্শণার্থী কেন্দ্র যাওয়ার এবং ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।
-এমএ