বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে ভাতা পান। তবে আর গেজেট নিয়মিত করার সুপারিশ পেলেন না মহানগরীর ১২৬ জন। এঁদের মধ্যে ৮৪ জনের আবেদন সরাসরি নামঞ্জুর করা হয়েছে। ২৬ জন গেজেট নিয়মিত না করার আবেদন না করার কারণে তাঁদের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়নি।
আর আটজনের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্তি সিদ্ধান্ত আসায় তাদেরও সুপারিশ করা হয়নি। এছাড়া আরো আটজনের ব্যাপারে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলকে (জামুকা) সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। বাকি ৩৪ জনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট নিয়মিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কমিটি সুপারিশসহ এই ১৬০ জনের ব্যাপারে প্রতিবেদন গত মঙ্গলবার জামুকায় পাঠানো হয়েছে। জামুকার নির্দেশনা অনুযায়ী গত ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে এই যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। চার সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান। সদস্য সচিব ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। অন্য দুই সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এস. মনিরুল ইসলাম।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, কমিটির সুপারিশ না পাওয়া ১১০ জনের মধ্যে ৮৪ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের বহাল রাখার জন্য আবেদন করেছিলেন। বাকি ২৬ জন আবেদনই করেননি। এমনকি যাচাই-বাছাই কমিটির সামনে তারা হাজিরও হননি। প্রতিবেদনের মন্তব্যের কলামে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আর ৮৪ জনের আবেদন যাচাই অন্তে নামঞ্জুর করা হয়েছে বলে মন্তব্যের কলামে উল্লেখ করেছে কমিটি।
কমিটি মহানগর এলাকার মোট ১৬০ জনের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে। এর মধ্যে ৩৪ জনকে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট নিয়মিত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। আর অধিকতর যাচাই বা অন্য এলাকায় যাচাইয়ের জন্য সাতজনের নাম জামুকার কাছেই পাঠানো হয়েছে।
সাবেক একজন বিজিবি সদস্যের গেজেট বাতিলের ব্যাপারে আগেই হাইকোর্টে পিটিশন থাকায় সেটির ব্যাপারেও জামুকাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। অন্য আটজনের ব্যাপারেও দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে বলে কমিটি উল্লেখ করেছে। আর ১১০ জনের ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এদের বিষয়েও প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
আবেদন না মঞ্জুর হওয়াদের মধ্যে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নানও আছেন। তালিকায় তার ক্রমিক নম্বর-৮৫। আবেদন বাতিলের তালিকায় আরো আছেন বিএনপি নেতা কামরুল মনির, এরশাদ আলী ঈশা, নূর মোহাম্মদ পেনু, অ্যাডভোকেট অঙ্কুর সেন, রাজশাহী সিটি করর্পোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র রেজাউন নবী দুদু প্রমুখ।
আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রমিকলীগ সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান বলেন, ‘এখন বাতিল হয়ে গেলে কী করব! আমি তো মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক কাজ করেছি। ২০০৬ সালের দিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছি। তখন থেকেই ভাতা পাচ্ছি।’
যাচাই-বাছাইকালে মহানগরীর যে আটজনের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে তারা হলেন- মৃত নজিবর রহমান, মৃত হিসাব উদ্দীন আহমেদ, রুহুল আমিন প্রামানিক, বদরুল আলম, আবদুল আজীজ, মজিবুর রহমান, মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সারওয়ার ই-কামাল স্বপন।
যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণক প্রয়োজন। এর মধ্যে জামুকার সুপারিশও প্রয়োজন। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীর ৫৫২ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ১৬০ জনের ব্যাপারে জামুকার সুপারিশ ছিল না। সে কারণে তাদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়। যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন মঙ্গলবার জামুকায় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জামুকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গ্রহণ করবে বলেও জানান তিনি।
আরএইচএফ/এসআর