মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে মুন্সীগঞ্জ মিরকাদিমের রিকাবীবাজার বটতলায় ফাতেমা জেনারেল হাসপাতালে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এসময় হাসপাতালটিতে কর্মরত শেখ সাদি (৩০), আল-আমিন (৩৮) ও জুয়েল (৩৮) নামে ৩ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হামলা কারীরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া বর্তমান মেয়র মো. শহিদুল ইসলাম শাহীনের প্রতিষ্ঠানে এই হামলা চালিয়েছে নৌকা প্রার্থী আব্দুস সালাম সর্মথকরা। হামলাকালে হাসপাতালটিতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীনের মালিকানাধীন ফাতেমা জেনারেল হাসপালটিতে বৃহস্পতিবার রাত ৭ টার দিকে একদল সন্ত্রাসী দেশিও অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে জয় বাংলা জিতবে এবার নৌকা এই শ্লোগান দিয়ে হাসপাতালটিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে হাসপাতলটিতে ভর্তি থাকা রোগীরা।
এব্যাপারে হাসপাতালটির ম্যানেজার সবুজ বলেন,পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। হামলার মূল কারণ হাসপাতালটি বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীনের পার্টনারশিপ রয়েছে। তাই অর্তকিতভাবে হামলা চালিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় তারা। এসময় হাসপাতলে ভাঙচুরের পাশাপাশি ৩ জন স্বাস্থ্য কর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
হাসপাতলটির এক নার্স জানান, আমরা প্রতিদিনের মতো কাজ করছিলাম। এ সময় ১০ থেকে ১৫ জন হাসপাতালের ভেতরে জোর করে প্রবেশ করে। হাসপাতালে অফিস কক্ষে গিয়ে অফিসের স্টাফ আলামিন ভাইসহ কয়েকজনকে বেদম ভাবে পেটানো শুরু করে। আমরা হাসপাতালে ভিতরে কক্ষ থেকে বাইরে আসলে আমাদেরকে ধমক দিয়ে ভিতরে চলে যেতে বলে। তারা অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সন্ধ্যা ৭ টার দিকে একটি দুর্বৃত্তের দল ফাতেমা জেনারেল হাসপাতালে দুই তালার কক্ষে যায়। সেখানে তারা ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার সাথে স্থানীয় ছেলেপেলেরাই জড়িত।
স্থানীয়রা জানান, গত উপজেলা নির্বাচন বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম নৌকার পক্ষে ছিলেন। একই পৌরসভার বাসিন্দা জেলা আ.লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এরপর থেকেই দুপক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরকাদিম পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক পাওয়ার দৌড়ে তৃণমূলের ভোটে এগিয়ে ছিলেন বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম। তবে কেন্দ্র থেকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়, মনছুর আহামেদ কালাম অনুসারি আব্দুস সালামকে। শহিদুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে এসেছিলেন। তবে কিছুদিন আগে নৌকার সমর্থন জানিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর থেকেই মেয়র শহিদুল ইসলাম ও তার লোকজনকে কোণঠাসা করতে বিভিন্ন সময় হামলা-মারধরের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে অন্য পক্ষটি।
মিরকাদিম পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম জানান, নৌকাকে শ্রদ্ধা করে, নৌকাকে ভালোবেসে পৌর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। তারপরেও বিএনপি-জামায়াত থেকে আগত, নব্য আওয়ামীলীগ এবং জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মনছুর আহামেদ কালামের লোকজন বিভিন্নভাবে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও লোকজনকে মারধর করে চলেছে। বিষয়টি বেশ কয়েকবার পুলিশকে জানিয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আজকে তারা আমার হাসপাতালে হামলা চালালো। আমার লোকদেরকে মারলো। হাসপাতাল থেকে টাকা পয়সাও নিয়ে গেল। হাসপাতালের রোগীরা ভয়ে চলে গেছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীন আরো বলেন, গত মেয়র নির্বাচনে পরাজিত মনছুর আহামেদ কালাম, বিএনপি ও নৌকা মিলে তার মালিকানাধীন হাসপাতালটিতে হামলা চালায়। এ সময় তারা হাসপাতাল থেকে আনুমানিক নগদ ৫ লাখ টাকা, হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা, এলইডি টিভি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
এদিকে, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে মিরকাদিমে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মেয়র সমর্থিত আওয়ামীলীগের একটি অংশ এলাকায় যেতে পারছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালামের মুঠোফোনে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)আবু বক্কর সিদ্দিক বৃহস্পতিবার রাতে জানান, ঘটনাটি শুনতে পেরে আমরা হাসপাতালে যাই। এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাতিমারা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. রাজিব খান জানান, হাসপাতালের অফিস কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক আছে।
ওদিকে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় আওয়ামীলীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় মেয়র শাহীন।
এরপর এক রিটে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করায় মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
আদালতে ওই দিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট পংকজ কুমার কুণ্ডু, অ্যাডভোকেট এ এফ এম হাকিম ও আইনজীবী শাহ মোহাম্মদ ইজাজ রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ এম. রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমজি সরোয়ার পায়েল।
এরপর বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মিরকাদিম পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।বৃহস্পতিবার তার শুনানি হয়। ফলে ১৪ ফেব্রুয়ারি এই পৌরসভার নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে এ আদেশ দেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পৃথক তিনটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন।
মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে রিটকারীদের আইনজীবী শাহ মোহাম্মদ ইজাজ রহমান বলেন, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করায় মিরকাদিম পৌরসভার নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন আদালত।
এইচএস