রাজশাহীতে সেচপাম্প মালিকদের ফাঁদে অসহায় চাষিরা |
![]() রাজশাহীর পুঠিয়ায় সেচপাম্প মালিক ও বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকুপের ফাঁদে অসহায় হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বোরো চাষিরা। নলকুপগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন প্রতিবছর তাদের ইচ্ছেমত সেচ ভাড়া নির্ধারণ করছেন। নানা অযুহাতে প্রতি বিঘা জমির জন্য কৃষকদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে ভাগ-বাটোয়ারা করছেন তারা। চাষিরা জানিয়েছেন, সমিতির দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএমডিএর আঞ্চলিক অফিস, সেচ কমিটিসহ বিভিন্ন দফতরকে অবহিত করেও তার কোনো প্রকার সুফল পাচ্ছেন না। প্রতিকার না পওয়ার ফলে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের অধিনে অধীনে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলী জমি রয়েছে। জমিগুলোতে ফসল উৎপাদনে সেচ সহায়ক হিসেবে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের গভীর নলকুপ রয়েছে ১৫০টি, ব্যক্তি মালিকানা ৪১টি ও অগভীর সেচপাম্প রয়েছে আরো প্রায় সাত শতাধিক। এবছর প্রাথমিক ভাবে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০০ হেক্টর বেশি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অবহেলা ও সেচ কমিটির উদাসীনতায় ফসলী জমির সুনির্দিষ্ট সেচ ভাড়া আজও নির্ধারিত হয়নি। ফলে চাষিরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের জন্য প্রিপেইড কার্ড বা ঘন্টা অনুযায়ী পানি পাচ্ছেন। অথচ বোরো ধানের ক্ষেত্রে সেচ নিতে হচ্ছে প্রতি বিঘায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা চুক্তিতে। জিউপাড়া এলাকার কৃষক মতিউর রহমান বলেন, আমাদের এখানে এবার বোরো ধানের এক বিঘা জমিতে সেচ ভাড়া নির্ধারণ করেছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা। যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। গত দুই বছর পূর্বে ছিল মাত্র ১ হাজার টাকা। প্রতিবছর সেচ কর্তৃপক্ষ নানা অযুহাতে আমাদের নিকট থেকে দ্বিগুন-তিনগুন পরিমাণ হারে টাকা আদায় করছেন। এবার ধান চাষে লেবার, পানি ভাড়া, সার-ওষুধে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক বোরো চাষী লোকসানের আশঙ্কা করছেন। কাঠালবাড়িয়া এলাকার গভীর নলকুপ সমিতির সভাপতি শাহাদত আলী বলেন, এবার আমাদের এরিয়ার অনেক কম জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। সে কারণে সেচ ভাড়া একটু বেশী হয়েছে। সে ক্ষেত্রে এবার প্রতি বিঘায় ২ হাজার ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পুঠিয়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী আল মামুনুর রশীদ বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান রোপন থেকে উৎপাদন পর্যন্ত সর্বচ্চ ১০ ঘন্টা পানি লাগতে পারে। আমার জানা মতে, গভীর নলকুপের পানি সরবরাহের জন্য প্রতিঘন্টা ১২০ টাকা খরচ হয়। আর কোনো নলকুপের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ব্যয়কৃত অর্থ কৃষক পরিশোধ না করলে সে ক্ষেত্রে প্রতি ঘন্টায় ১৭০ টাকা হতে পারে। তবে মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি শোনা যায়। আমরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু গভীর-অগভীর নলকুপের সেচ ভাড়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্মকর্তা শামসুনাহার ভূঁইয়া অতিরিক্ত সেচের ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সেচ ভাড়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা এই উপজেলায় নেই। তবে আগামী উপজেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে সেচ ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, সেচের ভাড়া অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। আর বোরো জমিতে সেচ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা আছে কিনা? সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরএইচএফ/এসআর |