কর পরিশোধ করেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না নালিতাবাড়ী পৌরবাসী |
![]() পৌরবাসীর অভিযোগ, ভোটের সময় প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি থাকলেও, জয়ের পর সবই ভুলে যান তারা। নিয়মিত কর পরিশোধ করেও মেলে না কাঙ্খিত সেবা। নালিতাবাড়ীতে নাগরিক সুবিধা না পাওয়া নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলেও বেহাল ড্রেনেজ ব্যবস্থায় নাকাল এখানকার বাসিন্দারা। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে নিশ্চিত হয়নি, সুপেয় পানি সরবরাহ। পৌর শহরে নেই পাবলিক টয়লেট, এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মহাসড়কের পাশেই ময়লার ভাগাড়, বৃষ্টি এলেই জলাবদ্ধতা, ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পানি বের হবার উপায় নেই শহরের ড্রেন দিয়ে। এতে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পৌরবাসী। শহরজুড়ে যত্রতত্র রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজির ষ্ট্যান্ড। যার কারণে যানযট নিত্যদিনের সঙ্গী নালিতাবাড়ী পৌরবাসীর। সাপ্তাহিক হাটের দিনগুলো যেন ভোগান্তির আরেক নাম যানযট। নিয়মিত টোল দিলেও ছোট যানবাহগুলোর নির্ধারিত ষ্ট্যান্ড না থাকায় আমাদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ে না। দ্রুত নির্ধারিত ষ্ট্যান্ড প্রয়োজন বলে জানালেন সিএনজিচালক আলমাছ মিয়া। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর চেহারা ভালো হলেও, দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। যার কারণে বাসা বাড়ির সামনেই ময়লার স্তুপ করে রাখতে হয় পৌরবাসীর। সময় মতো তা অপসারণ না করায়, দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, বাড়ে মশার উপদ্রব। মিনারা বেগম নামের এক গৃহিনী অবজারভারকে বলেন, 'মেয়র সাব তো এখনো ময়লার বিষয়টা আমলেই নেন নাই। এ জন্য তো মশার কামড়ে আমরা অতিষ্ট।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, 'বর্তমান মেয়র তো উনার সরকারি রুটিন কাজগুলোই করছেন। এর বাইরে তো উনি কিছু করেন নাই, আমাদের জন্য। আমাদের সেবার মানেরও তো উন্নতি হয়নি।' এবার নালিতাবাড়ী পৌরসভায় মেয়র পদে সরকারদলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক। গত মেয়াদে নিয়মিত কাজ করলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, শহরের যানযট, পৌর টেন্ডারসহ কিছু বিষয়ে মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। স্থানীয় ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ বলেন, 'বিগত সময়ে ক্ষমতায় থাকা মেয়াদে বিভিন্ন সময় মেয়র সাব তার কাছের লোকদের দিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ করিয়েছেন। নিজের লোকদের দিয়ে কাজ করানোর কারণে কাজের মানও খুব খারাপ হয়েছে। ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়ন নিয়েও মেয়র সাব খুব ঝামেলা করছেন। ২০২০-২১ সালের নগর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে নিজের লোকদের দিয়ে কাজ করিয়েছেন, এগুলা তো ঠিক হয়নি তার।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, 'সরকার প্রধান যেখানে বিজয় দিবসের সব অনুষ্ঠানে গণজমায়েত বাদ দিতে বলেছিলেন, সেখানে আমাদের মেয়র বিজয় দিবসের (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ১০ হাজার মানুষ জমায়েত করে তার নির্বাচনী মিছিল করেছেন। সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করা তো একজন মেয়রের পক্ষে ঠিক হয়নি।' নাগরিক সমস্যার কথা স্বীকার করলেও, মেয়রের দাবি উন্নয়নে চেষ্টার কমতি ছিল না। নির্বাচন ঘিরে ফের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন আবু বক্কর সিদ্দিক। অবজারভারকে তিনি বলেন, 'গত মেয়াদে কিছু কাজ অসম্পূর্ণ ছিলো, যা সম্পন্ন করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে একটি কমিটি করেছি। এবার জয়ী হলে, সকল অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করে সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ।' এদিকে, সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকির ভয়ে মাইক প্রচারণাও ঠিকভাবে করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। তার অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কিছু সমর্থক শহরের আড়াই আনি বাজারে আমার মাইক প্রচারককে হুমকি দিয়ে ব্যানার খুলে ফেলার চেষ্টা করেছিলো। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন আমরা চাই। মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে আমিই বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।' অন্যদিকে, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শানিয়াজ্জামান তালুকদার। তিনি বলেন, 'আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাঠে রয়েছে। এখনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি. কোন প্রার্থী অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।' নালিতাবাড়ী পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ হাজার ১৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৬৩১ জন ও নারী ভোটার ১১ হাজার ৫০২ জন। আগামী ৩০ জানুয়ারি (শনিবার) পৌর নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। -এমএ |