এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ, সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ২৭ জানুয়ারি
Published : Sunday, 24 January, 2021 at 5:12 PM Count : 753
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে (১৯) গণধর্ষণের মামলায় আদালতে বাদিপক্ষের সাক্ষীরা উপস্থিত না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে ২৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোববার সকাল ১১ টায় সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হকের আদালতে এ তারিখ নির্ধারণ করেন। এসময় মামলায় গ্রেপ্তারকৃত এজাহারনামীয় ৮ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলো।
এব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পিপি রাশিদা সাঈদা খানম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বাদিপক্ষের আইনজীবী সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ছিনতাই মামলা একই আদালতে একসাথে বিচার কাজ শুরু করার আবেদন করেন। বিচারক তা খারিজ করে আগামী তারিখে সাক্ষী হাজির করার নির্দেশ দেন।
এদিকে, গত ১৭ জানুয়ারি অভিযোগ গঠন করে আজ ২৪ জানুয়ারি প্রথম গ্রহণের সাক্ষ্য তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন আদালত। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আবুল কাশেমের আদালতে ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য। এতে ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান করে ছয় জনের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণে জড়িত থাকা এবং অপর দুই জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পরে ১৭ জানুয়ারি সকাল ১১টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পুলিশ এজাহারভুক্ত মামলার ৮ আসামিকে আদালতে হাজির করলে সকল আসামির উপস্থিতেই মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
সরাসরি জড়িতরা হলেন, সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া। আর রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে ৩ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর এই মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ ছিলো। এদিন বাদীর পক্ষে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূ (১৯)’কে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে ওইদিন রাতেই মহানগর পুলিশের শাহপরাণ (রহ.) থানায় নির্যাতিতা নারীর স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। পুলিশ ও র্যাব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিলেটের সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এজাহারভূক্ত ছয় আসামিসহ আটজনকে গ্রেফতার করে। গত ২৯ নভেম্বর দুই মাস পর আসামিদের ডিএনএ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে জানানো হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বামীকে নিয়ে শাহপরান মাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন নির্যাতনের শিকার তরুণী (১৯)। ফেরার সময় তারা গাড়ি থামিয়ে ছিলেন নগরের টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে। স্ত্রীকে প্রাইভেটকারের ভিতর রেখে স্বামী পাশ্ববর্তী দোকানে গিয়ে ছিলেন। ওইসময় প্রাইভেটকারটি ঘিরে ধরে কয়েকজন তরুণ। প্রাইভেটকারসহ ওই দম্পতিকে তারা নিয়ে যায় বালুচর এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ভেতরে। সেখানে স্বামীর সামনেই গাড়ীর ভেতরে সংঘবদ্ধভাবে তরুণীকে ধর্ষণ করে ৬ তরুণ। পরে তাদের মারধর করে টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয় ধর্ষকরা। আরও টাকার জন্য আটকে রাখে তাদের গাড়িও। ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও ৩ দিনের মধ্যে ৬ আসামিসহ সন্দেহভাজন আরও ২ জনকে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ। সন্দেহভাজন দুই গ্রেপ্তারকৃত হলেন, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া। গ্রেপ্তারের পর তাদের প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সকলেই দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হলে তারা সবাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছেন। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
গণধর্ষণের এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সনদ বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।
এর আগে ঘটনার কয়েক দিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে তদন্ত করতে আসে। তদন্ত শেষে তারা তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। দীর্ঘ ১২৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি) কলঙ্কিত করেছে তারা।
বিসি/এইচএস