নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এনজিআরআই) তাদের নিজস্ব গবেষণাগারে সার্স-কভ-২ জিনোমকে সিক্যুয়েন্স করে দেশের প্রথম ও একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতিত্ব অর্জন করে।
প্রতিষ্ঠানটির স্কুল অফ হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেসের ডিন প্রফেসর হাসান মাহমুদ রেজার নেতৃত্বে এবং এনজিআরআইয়ের পরিচালক ড. মুহাম্মদ মাকসুদ হোসেন ইলিউমিনা মাই-সেক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ৫৮টি সার্স-কভ-২ ভাইরাসের নমুনার সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেছেন।
সার্স-কভ-২ ভাইরাস ২৯টি প্রোটিন নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে ৪টি গঠনগত প্রোটিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণা করা হয়েছে। কারণ এদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ঔষধ দিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর নিরাময় করা সম্ভব। এর মধ্যে স্পাইক প্রোটিন নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গবেষণা করা হয়েছে।
স্পাইক প্রোটিনগুলো ভাইরাল মেমব্রেন থেকে বেরিয়ে আসে এবং মানবদেহে অবস্থিত রিসেপ্টর এসিই-২ এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কোষগুলোতে প্রবেশ করে। স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনগুলো তাই ভাইরাসটির মানুষের কোষগুলোকে সংক্রমিত করার ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এনজিআরআই এই ৪টি স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে এমন কিছু বিরল মিউটেশন খুঁজে পেয়েছে যা সারা পৃথিবীতে এখনও পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্পাইক প্রোটিনে একটি মিউটেশন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের প্রথমবার দেখা গেছে।
স্পাইক প্রোটিনের ২০৪তম অবস্থানে অ্যামিনো অ্যাসিড টাইরোসিন (ওয়াই) অ্যামিনো অ্যাসিড ফিনাইলঅ্যালানিন (এফ) কে প্রতিস্থাপিত করে এই মিউটেশনটি সৃষ্টি হয়েছে। যাকে ওয়াই২০৪এফ নামে অভিহিত করা হচ্ছে। দুটি নমুনায়
একই মিউটেশন পাওয়া গেছে।
আরও লক্ষণীয় যে, যেই জিনোমে এই রূপান্তরটি সংঘটিত হয়েছে তা বি/১/৩৬ লিনিয়েজের অন্তর্ভুক্ত। এই মিউটেশনটি সার্স-কভ-২ স্পাইক প্রোটিনের কাঠামো এবং কার্যক্রমের পাশাপাশি ভাইরাসের সংক্রমণে ক্ষমতার ওপর অর্থপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে কি না তা নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসটিইউ) এর অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ ও আমিনুল ইসলামও এই গবেষণায় গ্রহণ করেন।
গবেষক দলটি এই লিনিয়েজটিকে অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি ভাইরাস হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং ভাইরাসটি কমিউনিটি বা পরিবেশে আরও ভাল ভাবে টিকে থাকার জন্য এই পরিবর্তন করেছে বলে মনে করছেন। ভারত এবং সৌদি আরবে কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়া রোগীদের শরীর থেকে ভাইরাসের যে নমুনা সংগ্রহ করে সিকোয়েন্স করা হয়েছে
এবং পরবর্তীতে জিআইএসএআইডি'তে যে সিকোয়েন্স এর ফলাফলগুলো সংরক্ষিত হয়েছে। সেখানে এই লিনিয়েজের ভাইরাস পাওয়া যায়।
জিআইএসএআইডি এ সংরক্ষিত সিকোয়েন্স অনুসারে ভারতে মারা যাওয়া ৫২টি রোগীর শরীর থেকে পাওয়া ভাইরাসের ১০টিই এই লিনিয়েজের অন্তর্গত। সৌদি আরবের ১২১টি জিনোমের প্রায় অর্ধেক এই লিনিয়েজের।
এছাড়াও যুক্তরাজ্য (৪৫%) ডেনমার্ক (৯%) এবং কানাডায় এই লিনিয়েজ পাওয়া গিয়েছে।
দলের অন্য সদস্যরা হলেন, প্রফেসর আবদুল খালেক, প্রফেসর কাজী নাদিম হাসান, অরা রহমান, তাহরিমা হক, নওশিন, আবদুস সাদিক, জাহিদুল আলম প্রমূখ।
-এমএ