For English Version
বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
হোম

৪৯ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে লেখা হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের নাম

Published : Monday, 14 December, 2020 at 12:52 PM Count : 787

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর জেলা হানাদার মুক্ত হয়।  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তথাকথিত শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের প্রত্যক্ষ মদদে জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত হিন্দু-মুসলিম-খ্রীস্টান মুক্তিকামী নিরীহ মানুষকে নীর্বিচারে হত্যা করে গণকবর (মাটিচাপা) দিয়ে রেখেছিলো হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতা পরবর্তী চার যুগ পার হলেও মাদারীপুরে সেই গন কবর সংরক্ষনে এগিয়ে আসেনি কেউ। জেলার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মাদারীপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য বা স্মৃতি তুলে ধরার জন্য নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি স্তম্ভ।

মাদারীপুর শহরের শকুনী লেক এলাকায় প্রায় ১ যুগ আগে মুক্তিযুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতি স্তম্ভের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সেখানে দীর্ঘ দিনেও অঙ্কিত হয়নি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা। ২০১৬ সালে স্মৃতিস্তম্ভটি শকুনী লেকের সৌন্দর্যবর্ধন কাজের জন্য সরিয়ে নেয়া হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। সেখানে নির্মাণকাজ শেষ হলেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা অঙ্কিত হয়নি। 

মাদারীপুরের মানুষের ধারনা ছিলো এবারে হয়তো স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজের সাথে সাথে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা শোভা পাবে স্তম্ভে কিন্তু তা হয়নি, হযতো মুক্তিযোদ্ধাদের টানা-পোড়নে আরো এক যুগ পার হবে তালিকা চুড়ান্ত করতে।

অপরদিকে সংরক্ষনের অভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে মাদারীপুরের বদ্ধভুমি গুলো। মাদারীপুরের সহস্্রাধীক শহীদের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে এই বদ্ধভুমিতে। মাদারীপুর জেলায় রয়েছে ছোটবড় ১৫টি বদ্ধভুমি। ২০১৪ সালে সরকারীভাবে জেলার ১০টি বদ্ধভুমি উন্নয়ন ও সংরক্ষনের জন্য জেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহন করে। এবং ২০১৪-১৫ সালে মাদারীপুর গনপূর্ত বিভাগ সমীক্ষা চালিয়ে তা ঢাকায় প্রেরন করে।  গণপূর্ত বিভাগের সমীক্ষায় রয়েছে অনেক অসংগতি।  স্থান নির্বাচন, কোন বদ্ধভুমিতে কতটি লাশ রয়েছে, কোন তারিখে কিভাবে ঘটনা ঘটেছে তাও নির্ধারণ করা হয়নি।  ১৫টির মধ্যে ১০টি জেলা প্রশাসনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ৫টি বদ্ধভুমি থেকে যায় হিসাব বহির্ভূতাবস্থায়। হয়তো কালের আবর্তে তা হারিয়ে যাবে একদিন।  তবুও মন্দের ভালো ১০টি বদ্ধভুমি সরকারের নজরে আসছে।  মুক্তিযুদ্ধের কঠিনতম এসব স্মৃতি সংরক্ষিত না হলে একদিন হয়তো তা হারিয়ে যাবে। 
মাদারীপুরে যে সকল পরিবারের সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন আজও তাদের শহীদ পরিবার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও মাদারীপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম যেমন স্মৃতিস্তম্ভে লেখা হয়নি তেমনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি মিলেনি এবং সংরক্ষিত হয়নি গন কবর বা বদ্ধভুমি।

হায়না পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে মাদারীপুরে নিহত মুক্তিকামী মানুষের যেসব গণকবরে শেষ ঠিকানা হয়েছিল তার মধ্যে মাদারীপুর শহরের এ আর হাওলাদার জুটমিলের অভ্যন্তরে গণকবর,রাজৈর উপজেলার সেনদিয়া বা সিন্দিয়া গণকবর, সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিযনের কলাগাছিয়া, চৌহদ্দি ও শিকারীবাড়ি গণকবর, সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিঠাপুর শিকদারবাড়ি গণকবর, সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ঘটমাঝি গণকবর ও কালকিনি উপজেলা সদরের লালব্রীজ গণকবর সনাক্ত করা হয়েছে।  এসব গণকবর সনাক্ত করা হলেও আজ অবদি গণকবরগুলো সংরক্ষনের কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেই এ আর হাওলাদার জুট মিলের প্রধান বদ্ধভূমিটি এখনো অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। ৭২ সালে এই বদ্ধভূমি থেকে ১৮৩ জন শহীদের মাথার খুলি উদ্ধার হয়েছিল। এই বদ্ধভূমিটি এখন গো চারন ভূমি। এই গণকবরে শত শত মুক্তিযোদ্ধা সহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছিল। 

জানা গেছে, জেলা প্রশাসন থেকে এই গণকবরটি সংরক্ষনের উদ্যোগ নেওয়া হলে স্বাধীনতা বিরোধীর এক উত্তরসূরী তাতে বাধা দিতে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে সংরক্ষন কাজে বাধা প্রদান করে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক কলঙ্কিত ইতিহাস মাদারীপুরের সেনদিয়া গনহত্যার ইতিহাস। ৭১ এর মে মাসের শেষভাগে সম্ভবত বাংলা ১৩৭৮ সালের জৈষ্ঠ মাসের ৫ তারিখ বুধবার রাজৈর উপজেলার হিন্দু ও কিছু খ্রীস্টান অধ্যুষিত এলাকা সেনদিয়া,পালিতা,ছাতিয়ানবাড়ী ও খালিয়া গ্রামের ১২৭ জন শিশু-নারী-পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। 

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাজৈর উপজেলার একজন স্বাধীনতা বিরোধী প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নৌ-পথে গোপালগঞ্জের ভেন্নাবাড়ি নেমে এলাকার বিভিন্ন হিন্দু বাড়িতে অগ্নি সংযোগ ও ধরপাকড় করতে করতে তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার রাজৈর থানার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি হয়ে উল্লাবাড়ি গ্রামে এসে হত্যাকাণ্ড চালায়। 

হানাদার বাহিনী উল্লাবাড়ি থেকে অগ্নি সংযোগ, গুলি ও ধরপাকড় করতে করতে সেনদিয়ায় আসছে খবর পেয়ে সেনদিয়া,পলিতা,ছাতিয়াবাড়ি ও খালিয়া গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ ও তাদের শিশু সন্তানসহ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা প্রাণ বাঁচাতে পশ্চিম সেনদিয়ার একটি আখ ক্ষেতে আশ্রয় নেয়। এসময় রাজাকারদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী বিভিন্ন গ্রামে অবস্থানকারী মহিলাসহ নিরীহ লোকজনকে ধরে নিয়ে পরিত্যাক্ত ভিটায়, পুকুর ও খালপাড়ে, বাঁশবাগানে নির্মমভাবে হত্যা করা ছাড়াও আখ ক্ষেতে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশুকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে ফেলে রেখে যায।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেনদিয়া গণকবর সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেয়নি স্বাধীনতার স্বপক্ষের দাবিদার সরকারও।আখক্ষেতের ব্রাশফায়ার থেকে সেদিন বেঁচে যায় প্রভাষ নামের ৫ মাসের এক শিশু। পিতৃ-মাতৃহীন এই শিশুটি লালন-পালনের দায়িত্ব নেন গোপালগঞ্জস্থ বানিয়ারচর মিশনারীর ফাদার মারিনো রিগান। সেদিনের শিশু প্রভাস এখন যুক্তরাস্ট্র প্রবাসী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মোশী বাড়ৈ নামে খ্যাত। এই মোশী বাড়ৈর প্রচেস্টায় বানিয়ারচর মিশনের মাইকেল বাড়ৈ ও স্থানীয় লোকজনের তত্বাবধানে ২০০৯ সালে সেনদিয়ায় ১২৬ জন শহিদের নামাঙ্কিত একটি নাম ফলক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। 

এব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, স্মৃতিস্তম্ভে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তুভুক্তির বিষয়ে কাজ করছি । আশা করি খুবই শীঘ্রই এবিষয়ে সমাধান হবে। 

এএইচ/এইচএস 

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft