গাজীপুরে ইটভাটায় বিবর্ণ গ্রাম
Published : Thursday, 10 December, 2020 at 4:08 PM Count : 499
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের শ্রীপুরের কাঁঠালী গ্রাম। এই গ্রামের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া মাটিকাটা নদী বাড়িয়েছে অপার সৌন্দর্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই গ্রামে পাখপাখালির শব্দে বিমোহিত হতো সবাই।
নানা ধরনের ঐতিহ্য নিয়ে বয়ে চলা গ্রামবাসীর দুঃস্বপ্ন শুরু হয়েছে একটি ইটভাটা নিয়ে। ‘মা ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটায় এখন বিবর্ণ হয়ে উঠছে পুরো গ্রাম। ফসলী জমিতে গড়ে উঠা এই ভাটার ফলে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে তেমনি এলাকার রাস্তাঘাটও ধ্বংস হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বরমী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বরকুল, কাঠালী ও বালিয়াপাড়া গ্রাম নিয়ে গঠিত। তিনটি গ্রামের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেছে বরমী-কাঠালী-গোলাঘাট সড়ক। প্রতিদিন প্রায় হাজারের উপরের লোক এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। স্থানীয়দের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে চলতি বছরেই সড়কটির কিছু অংশ পিচ ঢালাই করে উন্নয়ন করা হয়েছে। বাকী অংশ এখোনো ইটের সলিং। এই সড়ক ঘেঁষে নদীর পাড়ে পরিবেশ আইন অমান্য করে ফসলী জমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে এই ইটভাটা। এই ভাটায় নদী থেকে তোলা মাটি, ফসলী জমির উপর অংশের মাটি অবাধে কেটে আনায় এলাকার জমিও উর্বরতা হারাচ্ছে। প্রতিদিন ভারী যানবাহন দিয়ে ইট ভাটায় মাটি পরিবহন করায় রাস্তাঘাট এখন অনেকটা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
কাঁঠালী গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মফিজউদ্দিন মাষ্টার বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে ভাটা চালু হয়। ভাটার ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ে পড়ে। বিশেষ করে পাখপাখালির কিচিরমিচির শব্দ আর শোনা যায় না। ফসলী জমি ধ্বংস করে এভাবে লোকালয়ে ভাটা স্থাপন করায় এলাকার পরিবেশও বিপর্যয়ে পড়েছে। এলাকার মানুষের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ভাটা বন্ধের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার বলেন, এভাবে লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি এলাকার রাস্তাঘাট সবই নষ্ট হচ্ছে। একটি ভাটার ফলে দুর্ভোগে পড়েছে এলাকার হাজারো মানুষ। এই ভাটায় মাটি পরিবহনে সড়কের কিছু অংশ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, এই ভাটায় বৃক্ষ পোড়ানোর কারনে কালো ধোঁয়ায় বাতাসও বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এলাকার মানুষের সাধারন জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে এই ইট ভাটা। এই ভাটার কারনে অবাধে ফসলী জমি ধ্বংস হচ্ছে।
‘মা ব্রিকস’ ইটভাটার পরিচালক মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এই ইটভাটা চালানোর জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে। আমরা আবেদন করেই ভাটা চালু করেছি। অনুমোদন আসতে কিছুদিন দেরী হয়। অনুমোদন দেয়ার পর ভাটা চালু করতে গেলে মৌসুমই তো শেষ হয়ে যাবে। সবকিছু তো আর আইন মেনে চলানো যায় না। পুরো গাজীপুরের চিত্রই এমন।
এ বিষয়ে গাজীপুর পরিবশে অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, গত বৎসর সারা গাজীপুর জুড়েই অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছিল। আমাদের উদ্দেশ্য যে কোন ভাবেই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। চলতি বছরও অভিযান শুরু হয়েছে। এখানেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এসআর