বাউফলে লেদা পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষক |
![]() ধুলিয়া ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া গ্রামের সেলিম ফকির, জাহাঙ্গির খা, নিজাম খা, জসিম খা ও মজিবর সহ একাধিক কৃষক বলেন, ‘দফায় দফায় জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। এখন শীষকাটা লেদা পোকার কারনে অতিষ্ট সবাই। পোকার কারনে ধানের আশানুরুপ ফলন আসবে না। তারা বলেন, বাজার থেকে নানা ধরনের কীটনাশক এনে প্রয়োগ করার পরও ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে না। নাজিরপুর ইউনিয়নের সুলতানাবাদ গ্রামের ইউনুচ মৃধা, ধানদী গ্রামের আহেদ রাঢ়ী, আলতু রাঢ়ী, বড়ডালিমা গ্রামের জাহাঙ্গির মৃধা, তালতলী গ্রামের ছোবহান হাওলাদার ও ভরিপাশা গ্রামের সেলিম গাজী বলেন, বর্তমানে কৃষিকাজে আছে নানা বিপর্যয়। ধানের কাঙ্খিত বাজার দরও পাওয়া যাচ্ছে না। এক পর্যায়ে ধান গাছের গোড়ার দিকে লুকানো বেশ কয়েকটি লেদা পোকা তুলে হাতে নিয়ে তারা দেখিয়ে বলেন, ‘গত বছরের মতো ধানকাটা এই পোকায় এবারও সর্বনাশ করছে। কীটনাশকেও মরে না। সিডিয়াল, ওস্তাদসহ বিভিন্ন নামের ওষুধ অন্তত পাঁচ বার ছিটিয়েছি। কোন কাজ করে না ওষুধে। বাউফলের মাঠে মাঠে আমন ধানের ক্ষেতে চোখ জুড়ানো সোনালী-হলুদাভাব আসতে শুরু করেছে মাত্র। অতিবৃষ্টি, জোয়ারের পানি আর ঝড়োবাতাসে ক্ষয়-ক্ষতির পরে এবার শীষকাটা লেদা পোকার আক্রমনে কীটনাশক প্রয়োগ করে ভাল ফল না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে আধা-পাকা ধান কাটতেই ব্যাস্ত হয়েছেন অনেক কৃষক। ধুলিয়া ইউনিয়নের ঘুরচাকাঠি গ্রামের ছোবাহান হাওলাদারের ছেলে কৃষক বশার হাওলাদার জানান, ক্ষনিকাটা (শীষ কাটা) লেদা পোকার আক্রমনে তার চাষের স্থানীয় মাপের প্রায় তিন কানি জমির ধান বিনষ্ট হয়েছে। একই ধরণের পোকার আক্রমনের কারনে স্থানীয় মাপের ২ কানি পরিমান জমির ধানে কাচি ফেলতে পারবেন না মঠবাড়িয়ার জাহাঙ্গির খা। অপরদিকে লেদা পোকার আক্রমন থেকে ক্ষেতের ধান রক্ষায় সুলতানাবাদ গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদ দেওয়ানকে দেখা যায় সোনালী রঙের প্রায় পাকা ধানেও কীট নাশক ছিটাতে। এবার আমন মৌসুমের শুরুতেই ধানের বাজার দর মনপ্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা উল্লেখ করে ধানদী গ্রামের কৃষক রহিম মৃধা বলেন, ‘ধানের বাজার দর ভাল হলে কি আর না হলেই বা কি। এবার প্রায় দেড় একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে কেবল পোকার আক্রমনে।’ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্লান্ট ফাইটোলোজির এসোসিয়েট প্রফেসর ড. শাহ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পোকা দমন ও চাষাবাদে কৃষক-কৃষাণীদেরকে সচেতনতা সৃষ্টি খুবই জরুরী।’ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যানটোমোলোজির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দক্ষিনাঞ্চলে এ ধরণের অবস্থা প্রায়ই হয়ে থাকে। ১০-১২ বছর আগে একবার পাতা মোড়ানো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। গত তিন বছর আগে একবার কারেন্ট পোকা বা ধানের বাদামি পোকার আক্রমন হয়। লেদা পোকার আক্রমনের কথা গত বছরেও জানা গেছে। চলতি অর্থ বছরে উপজেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমি আমন চাষের আওতায় এসেছে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি অফিসের লোকজন লিফলেট বিতরণসহ মাঠে কৃষকদের সচেতন করে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। সার্বক্ষনিক ক্ষেতের অবস্থা জানানোর জন্য কৃষকদেরকেও অনুরোধ করা হচ্ছে। উপজেলায় এ বছর সরকারি ভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ৭৩৫ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে কৃষকরা কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এইচএস |