ভোলার ভূখন্ডে যুক্ত হচ্ছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর কুকরি মুকরি!
Published : Saturday, 28 November, 2020 at 11:18 AM Count : 593
প্রায় ৪শ বছর আগে পলি জমতে জমতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে জেগে ওঠে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ছোট দ্বীপ চর কুকরি মুকরি। বর্তমানে বাবুগঞ্জ, নবীনগর, রসুলপুর, আমিনপুর, শাহবাজপুর, মুসলিম পাড়া, চর পাতিলা ও শরীফ পাড়া নিয়ে কুকরী-মুকরী চর ইউনিয়ন।
চরফ্যাশন উপজেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুকরি মুকরি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের লক্ষ্যে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর সংযোগ চ্যানেল বুড়াগৌড়াঙ্গ নদীর ওপর ক্রস বাঁধ বা ক্রস ড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধারেই মূল ভূ-খন্ডে যুক্ত হবে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপ।
জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২০ কি. মি.। দূরের এই দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। যাদের বেশীর ভাগই নিরক্ষর।
জানা যায়, কুকরি-মুকরি, চর-মানিকা ও চর মন্তাজসহ উপকূলীয় এলাকার একাধিক চরাঞ্চলের মানুষকে মূল ভূ-খন্ড জেলা সদরসহ চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় নদীর পাড়ে অপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌ-পথে আসা যাওয়া করতে হয়। ফলে এসব অঞ্চলের মানুষকে নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এছাড়াও সন্ধ্যার পরই মূল উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই সময় যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা, ট্রলার বন্ধ থাকে। যে কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীসহ চিকিৎসা প্রার্থী অসুস্থ রোগীদের।
উপজেলার বিচ্ছিন্ন এসব চরে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লাখ, লাখ মানুষের বসবাস। প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠী চারপাশে বেষ্টিত নদী ও সাগর জলে দ্বীপ বন্দির মতোই জীবন অতিবাহিত করছে। জেলা ও উপজেলা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এসব চরের এই জনগোষ্ঠী শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প ও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি চরাঞ্চলগুলোর সঙ্গে মূল ভূ-খন্ড জেলা ও উপজেলা সদরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে দেশের জাতীয় উন্নয়নে তাদের অংশিদারিত্ব নিশ্চিত করা।
এর প্রেক্ষিতে ওই এলাকায় প্রকল্প প্রণয়নে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন এ চরাঞ্চলগুলো পরিদর্শন করেছে। বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী ও গভীরতাসহ ওই চরের জরিপের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন এসব এলাকার সঙ্গে উপজেলার চর মানিকা ইউনিয়নের মূল ভূ-খন্ডে ক্রসড্যাম নির্মাণ পরিকল্পনাসহ চর কুকুরি মুকরিকে ঘিরে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২।
চর কুকরি মুকরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন জানান, বুড়াগৌড়াঙ্গ নদীর ওপরে ক্রস বাঁধ বা ক্রস ড্যামটি নির্মিত হলে উপজেলার সঙ্গে দূর্গম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের সময় লাঘবের পাশাশি অর্থনৈতিক ভাবে তারা উন্নত হবে। পাশাপাশি অপার সম্ভাবনাময় পর্যটনখাত কুকরি মুকরি থেকে সরকারের অনেক রাজস্ব আয় হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ ভোলার চরফ্যাশনের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ক্রস বাঁধটি নির্মাণে দুটি রুপরেখায় বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষা করা যায়। যেমন- বুরাগৌড়াঙ্গ নদীর দুই মাথায় চর কুকরি মুকরি ও উপজেলার মানিকা ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের জন্য দু’টি বাঁধ দিয়ে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর পানি বুড়াগৌড়াঙ্গ দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া যায়। যেখানের কৃত্রিম বিশালাকৃতির জলাশয় থেকেও সরকার অনেক লাভবান হবে।
তিনি আরও বলেন, ক্রস ড্যাম নির্মিত হলে পলি জমে কুকরি মুকরি ও চর মন্তাজ সরাসরি যুক্ত হবে চরফ্যাশন তথা দ্বীপ ভোলা জেলার সঙ্গে। ফলে পুনরুদ্ধার হবে বিশাল অংশের হাজার হাজার হেক্টর জমি। যার মাধ্যমে এ জনপদগুলোর মানুষ আর্থসামাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়েই জাতীয় উন্নয়নের অংশিদার হবে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে খুব শীঘ্রই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার পর্যবেক্ষণে আসবেন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে দুটি রুপরেখার যেকোন একটির মাধ্যমেই বিচ্ছিন্ন চরগুলো মূল ভূ-খন্ড ভোলার সঙ্গে সংযুক্ত হবে বলে মনে করি।
-এসএফ/এমএ