রাজধানীর রামপুরায় মায়ের সামনে ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় পুলিশের খাতায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে।
তবে কাইয়ুমের শরীরজুড়ে ছিল রক্ত জমাট নির্মম আঘাতের চিহ্ন।
গত ০৩ অগাস্ট রাজধানীর রামপুরা থানাধীন পূর্ব রামপুরা ভূইয়া গলির নং-৪২ বাসায় এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিজের স্ত্রীর সঙ্গে বাড়িওয়ালার ছেলে অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলে ছিলেন কাইয়ুম খান (৩৫)। এ নিয়ে স্ত্রীকে গালাগাল করলে সে তার পরকীয়া প্রেমিক অনিককে দিয়ে তাকে উচিৎ শিক্ষা দেবে বলে শাসিয়ে বাড়িওয়ালার রুমে চলে যায়। পরে বাড়িওয়ালা নাছিরের কাছে কাইয়ুম তার ছেলের বিষয়ে বিচার দিয়েছিল। কিন্তু বিচার মেলেনি, উল্টো নিজের ছেলে অনিকের দোষ ঢাকতে বাবা-ছেলেসহ কয়েকজন মিলে রুমের ভেতর কাইয়ুমকে আটকে লোহার রড দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে।
নিজের চোখের সামনে একমাত্র সন্তানকে পেটানোর সেই লোমহর্ষক দৃশ্য দেখেছিলেন কাইয়ুমের মা রহিমা বেগম। এ সময় ছেলেকে বাঁচানো আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর সেই আত্মচিৎকারে কেউ সাড়া দেয়নি। একপর্যায়ে পুত্রবধূ শিরীন আক্তার জোর করে নিয়ে তাকে পাশের রুমে আটকে রাখে। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে শুনেন হাসপাতালে কাইয়ুম মারা গেছে।
রহিমা বেগম বলেন, সেদিন কাইয়ুম বাসায় ফিরে স্ত্রীকে বাড়িওয়ালার ছেলের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকতে দেখে। পরে বাড়িওয়াল নাছির বাইরে থেকে এলে তার কাছে বিচার দেয় কাইয়ুম। এরপর স্ত্রী ঘরে এলে তাকে গালাগাল করলে সে আবারও অনিককে ডেকে নিয়ে আসে। এ সময় নাছির-অনিকসহ কয়েকজন মিলে ঘরে ঢুকে দরজা-জানালা বন্ধ করে কাইয়ুমকে লোহার রড ও কাঠের চেলি দিয়ে পেটাতে থাকে। তখন কাইয়ুম নাছিরের পায়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানায় এবং কাউকে কিছু বলবে না বলে জানায়। নাছির তার কথায় কান না দিয়ে বুকে লাথি মেরে কাইয়ুমকে ফেলে দেয়। তখন অনিকসহ কয়েকজন কাইয়ুমকে এলোপাতাড়ি পেটায়। একপর্যায়ে কাইয়ুম নিছতেজ হয়ে পড়ে।
কাইয়ুমের চাচাতো ভাই মুনসুর জানান, কাইয়ুম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার স্ত্রী শিরীন আক্তার আমাকে ফোন করে দ্রুত বাসায় যেতে বলে। কাইয়ুমের কি হয়েছে জানতে চাইলে সে জানায় কাইয়ুম স্ট্রোক করেছে। কিভাবে হয়েছে জানতে চাইলে সে জানায় কাইয়ুম পড়ে গিয়ে মাথায় ব্যথা পেয়েছে। তখন আমি দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে যেতে বলি। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি কাইয়ুমের পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। এ সময় মোবাইলে একাধিক ছবি তুলি। যেখানে কাইয়ুরের হাতে পায়ে পেটে এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন। পরে চাচির কাছে শুনালাম রডের দিয়েছে পিটিয়েছে কাইয়ুমকে।
নিহত কাইয়ুমের মা রহিমা বেগম বলেন, দেড় বছর আগে ময়মনসিংহ গৌরিপুর থানাধীন বাংলাবাজার স্কুল সংলগ্ন রহমত আলীর মেয়ে শিরীন আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় কাইয়ুমের। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গ্রামের বাড়ি থাকতেন কাইয়ুমের মা। গত কোরবানির ঈদের আগে মা কে বেড়াতে নিয়ে আসেন কাইয়ুম।
রহিমা বেগমের ভাষ্য মতে, কাইয়ুমের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতাল থেকে পুলিশ তার কাছে আসে। তখন ঘটনা বিস্তারিত পুলিশকে বলেছিলাম। এরপর দারোগা সাব তখন বলেছিলেন, আপনার ছেলে হত্যার বিচার হবে। মামলা করার কথা বললে তিনি তখন একটা কাগজে তার একটি টিপসই নেয়। এখন শুনছি, সেখানে পুলিশ লিখেছে, ছেলে এমনিতেই মারছে।
পুলিশের এজাহার উল্লেখ করা হয়, ৩ আগস্ট১টা ৫০ মিনিটের দিকে বাড়ির কেয়ারটেকার কাইয়ুম পানির মোটর দেখতে যায়। ফিরতে দেরি হওয়ায় তার স্ত্রী মোটরের কাছে গিয়ে দেখতে পায়, কাইয়ুম অচেতন হয়ে পড়ে আছে। আশপাশের লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে এজাহারে বাদির কোন অভিযোগই উল্লেখ করা হয়নি। এতে রহিমা বেগমের টিপসই রয়েছে।
কাইয়ুমের চাচাতো ভাই মুনসুর রহমান অভিযোগ করেন, এজাহারটি পড়ে একাধিকবার রামপুরা থানায় গিয়ে মামলা করতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে।
রামপুরা থানার ওসি আ. কুদ্দুস ফকির জানান, কাইয়ুমের মৃত্যুর বিষয়টি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেই বলতে পারবো।
-এইচএস/এমএ